এ ও সে

এ:
শীতের সকাল বেলা রোদের ভিতর
ডেক-চেয়ারের ‘পরে ঢের বসা যায়;
পাখির মতন বুড়ো হ’য়ে
এইখানে তবু যেন বুড়ো আর হয় না হৃদয়!
ঐখানে গেলাসের জলের ভিতরে
মুক্তা এক প’ড়েছিল,-
সারা রাত গ’লে গ’লে
তার পর পৃথিবীতে
ছড়ায়ে পড়েছে যেন!

সে:
তবুও সে মুক্তা কেউ চুরি ক’রে নিতে পারে!

এ:
কোথায়? কখন?

সে:
সেই দিন শীত আরও বেশি হবে;
কাঁকড়াবিছের ছানা এসে
তোমার হাড়ের থেকে মাংস খেয়ে বেঁচে রবে;
কেউ জানে?

এ:
তোমরা জান না কিছু;
মুক্তা চুরি গেলে কোথাও র’বে তা তবু;
কোথাও গেলাসে জল র’য়ে যাবে;
আমার টেবিলে নয়
অন্য কারু দেরাজের নিচে

র’বে তবু;
তবুও তা র’বে!

আজ তবু এখানেই আছে;
তোমার হৃদয় থেকে হয়তো কাহারও হাত এসে
মেয়েমানুষের পেটে সন্তানের মতো
বাঁচায়ে রেখেছে তারে!

এমন সকালে আকাশের নীলের চেয়েও
নীল মলাটের বই ভালো লাগে!

সমুদ্রের জলের চেয়েও তারা নীল?

আরও নীল!

বইগুলো ঝেড়ে দেই?
মনে হয় ময়লা হয়েছে
সাদা বিড়ালের লেজ অন্ধকারে
ঝেড়ে দিয়ে যায়!

তখন সে ঘুমায়ে ঘুমায়ে

হয়তো হলুদ এক বিড়ালমেয়ের
সবুজ চোখের স্বপ্ন দেখে!
নরম থাবার নীচে
রূপার মতন তার নখ;
আমিও দেখেছি তারে।

সেই সব অন্ধকারে দেখেছ ত’!
-এখন দিনের বেলা;
টেবিলের থেকে গেলাস সরায়ে রাখি?

কোথাও কি নিয়ে যেতে চাও?

কোথাও;

নিয়ে যাও;

একখানা বই তুমি নেবে নাকি?

দাও;

হাতের ভিতরে বই রেখে দিয়ে
চোখ বুজে আছ তবু?

নিয়ে যাও;
(বইখানা ফিরিয়ে দিয়ে)
পাতার ভেতর থেকে কোন্ এক গন্ধ এসে যেন
নরম থাবার নীচে রূপার নখের কথা
সেই সব রুপকথা বলে!
সেই সব অন্ধকারে শোনা যাবে;
এখন শীতের বেলা তাড়াতাড়ি বেলা প’ড়ে যায়;…
দুধের ভেতর থেকে মাখন কোথায় যেন তোলে,-
আমি সেই শব্দ পাই!

কোথায়?

দুধের ফেনার চুমা কাহারও বুকের দুধে লাগে?

কই?…

হয়তো কাপাশ ফেটে গিয়েছে কোথাও!
তারই শব্দ হয়তো শুনেছ;
ভোরের হাওয়ায় তুলো তার ভেসেছিল;

চোখের পাতার পরে কেউ এসে কার যেন আঙুলের মতো লেগে থাকে!
আঁতুড়ের ঘরে এমন আঙুল থাকে,
মাখনের গন্ধ লেগে থাকে তাহাদের গায় যেন!
সন্ধ্যার অন্ধকারে সে সব দেখেছি ভেবে।

এখন সকাল বেলা তবু;

মাকড়ের পেটের ডিমের মতো সাদা অই আলো!

তবুও পৃথিবী যেন সেই ডিম ল’য়ে
চোখ বুজে এক দিকে র’য়ে গেছে স’রে;
স্বপ্ন দেখে তাহার সময় কেটে যায়!

ঐ হাওড়ের জল যেইখানে ফুরায়ে গিয়েছে
আর-এক পৃথিবী থাকে তবু;
তারে তুমি দেখ নাই

কেমন সে?
সেইখানে মাঠের উপরে
গোল হয়ে ‘গোসেমার’ নাই?

নাই;

সেইখানে বিকালের হাওড়ের জলে
মাছরাঙা ঢিলের মতন শব্দ করে
ডুবে যায় নাকি?

সেইখানে হাওড়ের জল ফুরায়েছে;

আমি তবু সেই দেশে যাই নাই;

ডেক-চেয়ারের গাছ এই দেশে আছে;- তবু-
চেয়ার সেখান থেকে আসে;
কাঠের পালিশ আছে সেইখানে,
লাল নীল কেম্বিশ্ রয়েছে,
দেরাজ টেবিল আছে,
এনামেল-রূপার পেয়ালা;
তোমার এ ঘরখানা এক দিন তারা এসে ক’রে গেছে।
এইখানে হাড়ের চিরুনি হাতে নিয়ে
এলোমেলো রোগা চুল বুলোতে বুলোতে
যখন দু’-চোখ তবু বুজে আসে সন্ধ্যায়,
আমার মাথার স্বপ্ন রূপার জালের মতো হ’য়ে
হাওড়ের অন্ধকার জলের উপর থেকে
ছায়া ধ’রে আনে!
তাই খেয়ে বেঁচে থাকে!

পৃথিবীর থেকে তুমি ন্যাকড়ার থলির মতন
খ’সে গেছ;
সোনায় রূপায় তার পেট চিরে যাবে,-
পাখির ঠোঁটের থেকে এক মুখ বাতাস সে চায়!