আহা, সেই সব দিন

আহা, সেই সব দিন-
যখন ছিলাম আমি গুপ্তচর- প্রকৃতিরানির-
দোয়েলের আগে আমি শিস দিয়ে উঠিতাম অন্ধকার বিছানার থেকে
রাতের হাওয়ার মতো একরাশ নক্ষত্রে আমার মুখ ঢেকে
ঢের জল- স্ফূর্ত জল- সূর্যের জননী ভেবে যেন তার ধূসর কবলে
গ্রামনারীদের মতো খেলে যেত- তাদের ঝঙ্কারে যেন মানুষের দেহ
প্রচুর তৃষ্ণার মতো হয়ে যায়- তার পর মলিন ফেনায় ভরা স্ফটিকের গেলাসের স্নেহ
শঙ্খমালা নিয়ে আসে যেন নীল জামরুল-ছায়ার ভিতরে
যে-পৃথিবী জল শুধু- রূপ শুধু- আধাে-অন্ধকার শুধু- হৃদয়ের তরে
এ-পৃথিবী জল শুধু- আমার হৃদয় যেন অপরূপ হিরার গেলাস
স্নিগ্ধ- হিম- সলিলের ফেনা-ভরা- গাঢ় মকরত-নীল মধুকূপী ঘাস
চারি-দিকে; পেঁচার কোমল আঁখি, বেতফল, কালো-পেড়ে শাড়ি-পরা জলের বনিতা
রুপালি রুইয়ের পুচ্ছ ডুবিবার আগে যেন পুকুরের অন্ধকারে হয় নিমজ্জিতা
তার পর ফিরে আসে মাছরাঙা না আসিতে- আননের আঁধার আবেগে…
মুসলমানপাড়া লেনে ট্রামের চাকার মতো লবেজান সূর্য ওঠে জেগে
আজ এই পৃথিবীতে;- খিদিরপুরের ডক ডাকিতেছে কাজের তাড়সে
যারা যাবে চ’লে যায়;- আর-সব নখ দিয়ে খোঁচা-দাড়ি ঘ’ষে
শকুনের মতো তারা যাবে না কি দূর- সূর্য- ভাইটামিনে উড়ে
সমস্ত রৌদ্রের দিন শহরের এলোমেলো নিরাশায় ঘুরে
কোথাও মিষ্টির ঘ্রাণ আছে যেন- কোনও দূর সুপক্ক ডুমুরে।
বেলা বেড়ে যায়- তবু টাকা, সুদ, স্বার্থ, ক্ষুধা, সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গ ফুরিছে
শহরের দূরদর্শী প্রতিভায়;- ক্ষুধা মোর বাবুলাল কাহারের এক পাল ছাগলের পিছে
একখানা লাঠি হাতে নিয়ে এই ট্রাম-বাস-এরোপ্লেন-জনতারে ঠেলে
চ’লে যেতে চায় ক্রমে শঙ্খমালা-অধ্যুষিত দেশে- দূরে- মায়াবীর মতো অবহেলে
তার পর আবার আসিব ফিরে; কারণ বলিছে জল: শুষ্ক বালু নিয়ে তুমি জীবনের মানে
শুধে এসো; সমবায় গড় গিয়ে- কিংবা ব্যাঙ্ক- কিংবা ফের বিশাল নবীন
সাংহাই তৈরি কর গিয়ে তুমি হলুদ সমুদ্র-পারে;
চেয়ে দেখ গভীর নীলিমা
ডাকিতেছে মানবিক জাতিদের- লাল সাদা পাথরের পুরী সব- জীবনের বীমা
ডাকিতেছে জনতার ভাইদের;
জাতিতে-জাতিতে আর মানুষে-মানুষে কোনও বিভেদের সীমা
রবে না ক’;- শুধু তুমি বজ্রস্বরে ব’লে যাবে সকলেরে ডেকে
আরও ট্যাক্স- আরও সুদ- আরও গ্যাস…
মানুষ বাঁচিতে চায় যদি ক্লান্ত মানুষের কবলের থেকে।