আকাশে সাতটি তারা

ছেলে:
আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে- আমি এই ঘাসে
ব’সে থাকি; বাংলার নীল সন্ধ্যায় কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;
আমার চোখের ‘পরে- আমার মুখের ‘পরে- চুল তার ভাসে;
পৃথিবীর কোনও পথে এ কন্যারে দেখি নি ক’- দেখি নাই অত
অজস্র চুলের চুমা হিজলে, কাঁঠালে, জামে ঝরে অবিরত
জানি নাই এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে রূপসীর চুলের বিন্যাসে।

মেয়ে:
পৃথিবীর কোনও পথে: নরম ধানের গন্ধ- কলমীর ঘ্রাণ
কিশোরের পায়ের দলা মুথাঘাস,- লাল-লাল বটের ফলের
ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা- এরই মাঝে বাংলার প্রাণ
আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি পাই টের।

ছেলে:
আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হ’য়ে উঠেছে-
যে আমাকে চির-দিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনও দিন দেখি নি, সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হ’য়ে উঠেছে।

মেয়ে:
ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্রপারের কাহিনী,
রামধনু রঙের কাচের জানালা,
ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায়-পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরও দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস-
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়!
তোমার নগ্ন নির্জন হাত।

ছেলে:
রাতের বাতাস আসে
আকাশের নক্ষত্রগুলো জ্বলন্ত হ’য়ে ওঠে
যেন কারে ভালোবেসেছিলাম-
সমস্ত শরীর আকাশ রাত্রি নক্ষত্র- উজ্জ্বল হ’য়ে উঠছে তাই
আমি টের পাই সেই নগ্ন হাতের গন্ধের
সেই মহানুভব অনিঃশেষ আগুনের
রাতের বাতাসে শিখানীলাভ এই মানবহৃদয়ের
সেই অপর মানবীকে।
সে কে এক নারী এসে ডাকিল আমারে, বলিল:

মেয়ে:
তোমারে চাই-
বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ
খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি- কুয়াশার পাখনায়-
সন্ধ্যার নদীর জলে নামে যে আলোক
জোনাকির দেহ হ’তে- খুঁজেছি তোমারে সেইখানে-

ছেলে:
নতুন সৌন্দর্য এক দেখিয়াছি- সকল অতীত
ঝেড়ে ফেলে- নতুন বসন্ত এক এসেছে জীবনে;
শালিখেরা কাঁপিতেছে মাঠে-মাঠে- সেইখানে শীত
শীত শুধু- তবুও আমার বুকে হৃদয়ের বনে
কখন অঘ্রান রাত শেষ হ’ল- পৌষ গেল চ’লে
যাহারে পাই নি রোমে বেবিলনে, সে এসেছে ব’লে।

মেয়ে:
তুমি এই রাতের বাতাস, বাতাসের সিন্ধু-ঢেউ
তোমার মতন কেউ- নাই আর।
অন্ধকার নিঃসাড়তার মাঝখানে
তুমি আনো প্রাণে- সমুদ্রের ভাষা
ব্যথিত জলের মতন,
রাতের বাতাস তুমি,- বাতাসের সিন্ধু-ঢেউ
তোমার মতন কেউ- নাই আর।

ছেলে:
তোমার মুখের দিকে তাকালে এখনও
আমি সেই পৃথিবীর সমুদ্রের নীল,
নক্ষত্র, রাত্রির জল, যুবাদের ক্রন্দন সব-
শ্যামলী, করেছি অনুভব।
তোমার সৌন্দর্য নারি, অতীতের দানের মতন
ধর্মাশোকের স্পষ্ট আহ্বানের মতো
আমাদের নিয়ে যায় ডেকে
তোমার মুখের স্নিগ্ধ প্রতিভার পানে।

মেয়ে:
আমরা কিছু চেয়েছিলাম প্রিয়;
নক্ষত্র মেঘ আশা আলোর ঘরে
ঐ পৃথিবীর সূর্যসাগরে, ভেবেছিলাম
পেয়ে যাবে প্রেমের স্পষ্ট গতি
সত্য সূর্যালোকের মতন-

ছেলে:
সবার ওপর তোমার আকাশপ্রতিম মুখে রয়েছে
সফল সকালের রৌদ্র।
সৃষ্টি ও সমাজের বিকেলের অন্ধকারের ভিতর
সকালবেলার প্রথম সূর্য- শিশিরের মতো সেই মুখ;
জানে না কোথায় ছায়া পড়েছে আমার জীবনে,
সমস্ত অমৃতযোগের অন্তরীক্ষে।

আমাদের ভালোবাসা পথ কেটে নেবে এই পৃথিবীতে;
আমরা দু’জনে এই ব’সে আছি আজ- ইচ্ছাহীন-
শালিক পায়রা মেঘ পড়ন্ত বেলার এই দিন
চারি-দিকে-
এখানে গাছের পাতা যেতেছে হলুদ হ’য়ে- নিঃশব্দে উল্কার মতো ঝ’রে
এক দিন তুমি এসে তবু এই হলুদ আঁচল রেখে ঘাসের ভিতরে শান্তি পাবে।