বাংলার কৃষাণ

কয়েকটি বাংলা’র কৃষাণকে এইখানে প্রান্তরের পারে
ধরা গেল;- ধীরে তারা চলেছিল দীর্ঘ ছন্দে পৃথিবীর অবিচল পথে
গোরু’র-গাড়ির মতো চলেছিল লেখাজোখা মুছে ফেলে কুয়াশার নির্নিমেষতায় যেন
কোথাও যা অবশেষে সমুত্তীর্ণ হতে জানে, আহা-
ভূতের মতন আমি চমকিত করিলাম তাহাদের
গোধূলির স্তব্ধতায়;- লাজুক পাখির মতো হাতের ডানায় ন’ড়ে উঠে
বিস্ফারিত চোখে চেয়ে এক বার- তার পর শান্তি পেল তারা
ইতস্তত সংলগ্ন সন্নিবদ্ধ- মাটির ঢিলের মতো,
হাড়ের মতন- হয়তো-বা নক্ষত্রের হিম স্থির রুদ্ধ প্রকর্ষের মতো;
অনাদি নদীর জলে বিচরণ করে তারা চির-দিন- তারা তবু নদী
চেনে নাই;- জলে জাল ফেলা: কোথাও নতুন কিছু নাই
হৃদয়ঘড়ির যন্ত্র অবশেষে এক দিন স্তব্ধ হবে
মৃত্তিকাও এক দিন থেমে যাবে- মৃত মানুষের সাথে
এই মৃত্যু- মৃত্যু নাড়িনক্ষত্রের চেয়ে ঢের কাছে- তবু দূরে
ঢের দূরে- কাছে তবু; কাছেই বধির বোবা পারদের প্রলেপের মতন লুকায়ে
মুকুরকে রেখেছে সচল সক্রিয়
মানুষের জীবনের স্পষ্ট কাজটিকে আনন্দকে-
রাত্রির নদীর জলের- শান্ত জলের চাদরের মতো
আমাদের এই প্রাণ- এই ব্যবধান;- উপরের নক্ষত্রের থেকে নদীর গর্ভের নীচ- হিম- দুগ্ধ নক্ষত্র-রাশিকে
রেখেছে পৃথক- দু’-মুহূর্ত-

এরা এই সব জানে
ইহাদের হাড়ে মৃত্যু।
এরা তবু- শেষ- সমীচীন
দুগ্ধস্রোত ব’লে চিনে গেছে বৈতরণী তরঙ্গকে-
যদি মনে করি এইখানে লেনিনের প্রয়োজন- স্টালিনের-
হয়তো ফ্যাসিস্তেরও, তবুও হেঁয়ালি এক প’ড়ে থাকে
কুয়াশা-আবৃত ভারতীয় প্রান্তরের মতো-
ইংলন্ডের খেতে ঢেউয়ে আইলে- অথবা সোনালি খড়ে-ভরা সুনীল আব্রুৎসি’র মাঠে
রাশিয়ায়: অবিরল বরফক্লেদের বিবর্তমান কান্তারেও
মানুষের জঙ্ঘা এত মৃত্তিকার থেকে দূরে নয়।- নয়
এত পারবীন নক্ষত্রের পথচারী।
এইখানে অরণ্যের থেকে বাঘ ছবির বইয়ে চুপে চ’লে যায়
ছবির বইয়ের থেকে শকুনের মতন গন্ধ এসে সহসা তার পর বৃক্ষে মিশে যায়
বধিরের চোখে, অন্ধদের কানের পটহে
আহা, আজ রাতে তোমার কী প্রশ্ন আছে
এই সব সাগ্নিকের কাছে?
অগোচর নিরুদ্দেশ বায়ু থেকে যেন
অসংখ্য বিবর্ণ পিন নিমেষের সচলতা পেয়ে
চুম্বকের হাতে ধরা দেয়- এই ছায়া, এই পিণ্ড চারি-দিকে
তবু তারা চুম্বক-শৈলের গহীন প্রতীক নয়
নিক্ষয় রৌদ্রময় রাতে
আজ রাতে আমারও হৃদয় অবহিত- তবু বিপরীত
সেই হিরণ্যের থেকে দূরে- এই সব কৃষকেরা অন্ধকারে নীড়মুখি।