চৈত্রের দুপুর

অঘোরে ঘুমাতে আছে হাতের উপরে মাথা রেখে যেন চৈত্রের দুপুর
ক্ষীরুইয়ের খেতে শুয়ে- যত দূর চোখ যায় গঙ্গাফড়িঙের ঘাস অবিরল নিঃশেষিত পালঙের টোমাটো’র খেত
উঁচু-উচু তরুদের শিঙে-শিঙে সাদা মেঘ- বাতাসের শব্দের নির্বেদ
বাদামি ভেড়ার গন্ধ ছাতিম-ছায়ার নিচে- বালুঘড়ি বাজিতেছে ঝুর ঝুর ঝুর
চিনি আর তরমুজ মাংস নিয়ে মনে হয় নারী এক আসিছে মধুর

রৌদ্র যেন জাফরান বুদবুদ হয়ে এক লাল নীল কাচের জানালা
ছানিতেছে;- কোথাও শহরে দূরে ‘চাই শশা, চিনিচাঁপা কলা, চাই তরমুজ ফল’
হাঁকিতেছে ফলওয়ালি বালিকারা: সে-সবের মতো রং- গরমের দুপুরের মতন সফল
তাদের চিবুকে রক্ত- ভূমধ্যসাগর-পারে সেইখানে বাজারের রৌদ্রের জ্বালা
নরম করিতে আছে কমলা’র মধু- আতা- বরফের গুঁড়ি-মাখা বাতাবি’র ফালা

তারা আর আসিবে না এইখানে সাগরের অবিরাম সেতু পার হয়ে
তবুও এসেছে নিজে অনেক সম্ভার নিয়ে রূপসি শ্ৰেষ্ঠীর নারী- চৈত্রের দুপুর
‘নোনাফল পাকিতেছে’, বলিছে সে; ফল আমি চাই না ক’- শুধু তার কণ্ঠের সুর
শুনি আমি;- এখুনি সে চ’লে যাবে মনে হয়- তারে কোনও গভীর বিরহে
বেঁধে রাখ: মেহেদি পাতার ভিড়ে লুক্কায়িত ঝিঁঝিদের হরিতের মোহে

যেন এক দেয়ালের অই পারে বাজিতেছে ধুলো আর মাছিদের ভৌতিক বায়বী সারং
জামের বিস্তৃত ব্যাসে কী-যে সব ছাতকুড়ো- কী-যে শাঁস- কাঠঠোকরার প্রাণ জানে
পালকের টুপি এঁটে লাল মানুষের মতো এসেছে সে- পৌরুষ- শস্যের সন্ধানে
তাহার শিকারি আত্মা টের পায় তবু ধীরে পুরুষের জীবনের অস্পষ্ট ভড়ং
বাতাসে নারীর স্বাদ: বিলেতি-বেগুন খেত পেতেছে সোনার মতো রং

যেখানে অনেক ধান ভিড়েছিল- মাইলের-পর-মাইল- সেইখানে কয়েকটা আলাপী ছাগল
চরিতেছে- কী গল্প শোনাতে চায় চৈত্রের দুপুরে আজ তারা পরস্পরে
পায়ের খুরের নিচে সাদা মাটি, ঘাস আর কড়াইয়ের শুঁটির ভিতরে
সুস্বাদু ধোঁয়ার তাপ- শিঙের ওপরে রোদে ভেসে যায় টিয়ার সবুজ অনর্গল
আইবুড় ছাগবালিকারা কেন খেলা ক’রে খুঁড়ে গেছে অন্তহীন মাঠের ফাটল

আমের ছায়ার নিচে ঘাসে যেন একসার মেহগিনি-কাঠের টেবিল
মানুষের তরে নয়- ঐখানে চৈত্রের দুপুরের অশরীরী পরিদের সভা
হয়তো-বা অপ্সরিরা জড়ো হয়- হয়তো-বা বায়ুর শরীরে পুরুরবা
নতুন সন্দর্ভ কোনও জানাতেছে: আধাে-রৌদ্রে ঠেস দিয়ে- অজানা দু’টো চিল
আজও তারা প্রণয়ের পরিষদ- যদিও তাদের কাছে মানবীয় দেহ অশ্লীল-
তবুও আমার তরে রয়েছে মানবী এক: নাম তার চৈত্রের দুপুর
এনেছে সে ফুটি’র প্রকাণ্ড পেট- আধাে-সোনা- গভীর মসৃণ

মনে হয় নে কোনও মিশরের নীলিমার রৌদ্রের দিন
অনেক মাছির শব্দ- নারীদের হাসি- চিনি- ইহার ভিতরে ভরপুর
ভাঁড়ারের ধূসর পিরিচে আজও সেই সব ধুলো সুমধুর
লেগে আছে;- কোকিল সে-কথা জানে- বাদামগাছের উঁচু স্তূপের ভিতরে ঢুকে তাই
নিজেরে লুকায়ে রাখে বাসনার জাদুঘরে- আমিও সে পরিচিত স্থল
জানি, পাখি,- এ-দুপুর জানে তাহা- তোমার রক্তের তরে স্বপনের ভিজে পানিফল
রেখেছে সে অগণন- এইখানে ঘাসে শুয়ে রূপসির আর্দ্র হাতে গোলাপজামের থালা পাই
তোমার সঙ্গীতে, পাখি- যবপুষ্প-বিছানায় যেন আর সময়ের পতঙ্গেরা নাই

(মমি’দের আধাে-ঘুমে যেন কোন দূর রৌদ্রে মনের মমতা ছাড়া আর কিছু নাই)