দুপুরের রোদ

কলকাতা থেকে আমি এক দিন দু’-তিন দিনের ট্রাম-টয়লিং
শেষ ক’রে বহু দূর অব্দি চ’লে গেছি সময়ের বিবেচক দুপুরবেলায়
যেখানে খড়ের খেতে ব’সে আছে কয়েকটি বক
আত্মপ্রতীতিতে ঘড়ি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে গিয়ে
হৃদয়ে এনেছে এই দুপুরবেলাকে
এই সব ম্লান পাথরের দেশে আলো-মোড়া আকাশে ধানের খেতে আজ
খুঁজে পাব তাকে?
খয়েরি পাড়ের ডানা থেকে প্রাণ খুলে চোখ পা শরীরকে ঢেকে
মলিন গলার থেকে পালকের বাবরি ফুলায়ে
অনেক দিনের বক আমার চোখের দিকে চেয়ে
সাদা হয়ে মিশে গেল আকাশের গায়ে
তবুও তিনটি বক এবড়োখেবড়ো খেতে পিছে প’ড়ে আছে
তিনটি নিরীহ স্পষ্ট পাথরের মতো
যে-পাখি আমাকে দেখে উড়ে গেল- মনে হল কেন
ভারতী’কে কোথাও সে দেখেছে ফলত
আমার হৃদয়ে কোন লক্ষ্য আছে তা-ও পাখি জানে
আমার শরীরে, জানে, কোন স্থানে রয়ে গেছে আঁচিল কী জট
জলের নদীর মতো একটি নারীকে শুধু খুঁজে
আমিও পিছনে জল- প্রমাণের কী আছে অভাব
তবুও পাখির তার চোখে করুণার নদী অজ্ঞান জননী নিজেই
সভার ভাঁড়ের মতো সহসাই পরিচয় উজিয়ে
ব’লে গেল, যাকে চাও, সে তোমার খোঁজে গেছে এই পথ দিয়ে
শতরঞ্চ-খেলার মাঝখানে চাল দিতে ভুল হয়ে গেলে
যে-রকম হয়, প্রেম হয়ে আছে কেমন কষটা-ধূলোট

কোথাও একটি লোক নেই এই (আবছায়া) দেশে
কোথাও দুপুরবেলা ছাড়া কিছু নেই
চারি-দিকে কয়েকটা অবিকল একাকী জীবন
অপর না কিছু হয়ে- পাহাড়ের মতো প্রথমেই
দেখা দিল- ছেলেবেলা বিছানায় শৈশবে ঘুমের আগে চোখ বুজে আমি
অনুভব ক’রে গেছি যে-রকম যে-ক’টি পাহাড়
আজ এত দিন পরে প্রয়োজন হল তাহাদের
চোখে-চোখে এসে দাঁড়াবার।
ওদের ভিতরে ঢের সাদা পথ চিতিয়ে রয়েছে, রোদ রয়ে গেছে
অনেক নর্দমা বস্তি দোকান রয়েছে
সেইখানে জুয়ারির ঘরে আজ দুপুরের রোদ
পর্দার ও-পারে এক খাবার-টেবিলে থেমে গেছে
ঈষৎ সমানুপাতিক- সোনার ভিতরে ঠেলে যেটুকু যাওয়ার প্রয়োজন
তাই তার খোঁজে- তবু সে কোথাও নেই-
মনে হল তত দিন অর্ধেকটা আমার হৃদয়ে-
তবুও ক্বচিৎ ভারে কেটে আজ হয়ে গেছে ঈশ্বরী স্বয়ং।