একটি কবিতা

পৃথিবী প্রবীণ আরও হয়ে যায় মিরুজিন-নদীটির তীরে;
বিবর্ণ প্রাসাদ তার ছায়া ফেলে জলে।
ও-প্রাসাদে কারা থাকে?- কেউ নেই- সোনালি আগুন চুপে জলের শরীরে
নড়িতেছে- জ্বলিতেছে- মায়াবীর মতো জাদু-বলে।
সে-আগুন জ্ব’লে যায়- দহে না ক’ কিছু।
সে-আগুন জ্ব’লে যায়
সে-আগুন জ্ব’লে যায়
সে-আগুন জ্ব’লে যায়- দহে না ক’ কিছু।
নিমীল আগুনে ঐ আমার হৃদয়
মৃত এক সারসের মতো।
পৃথিবীর রাজহাঁস নয়-
নিবিড় নক্ষত্র থেকে যেন সমাগত
সন্ধ্যার নদীর জলে এক-ভিড় হাঁস অই- একা;
এখানে পেল না কিছু; করুণ পাখায়
তাই তারা চ’লে যায় সাদা, নিঃসহায়।
মূল সারসের সাথে হ’ল মুখ-দেখা।


রাত্রির সংকেতে নদী যত দূর ভেসে যায়- আপনার অভিজ্ঞান নিয়ে
আমারও নৌকার বাতি জ্বলে;
মনে হয় এইখানে লোকশ্রুত আমলকী পেয়ে গেছি
আমার নিবিষ্ট করতলে;
সব কেরোসিন-অগ্নি ম’রে গেছে; জলের ভিতরে আভা দ’হে যায়
মায়াবীর মতো জাদু-বলে।
পৃথিবীর সৈনিকেরা ঘুমায়েছে বিম্বিসার-রাজার ইঙ্গিতে
ঢের দূর ভূমিকার পর;
সত্য সারাৎসার মূর্তি সোনার বৃষের ‘পরে ছুটে সারা দিন
হ’য়ে গেছে এখন পাথর;
যে-সব যুবারা সিংহী-গর্ভে জ’ন্মে পেয়েছিল কৌটিল্যের সংযম
তারাও মরেছে- আপামর।
যেন সব নিশি-ডাকে চ’লে গেছে নগরীতে শূন্য ক’রে দিয়ে-
সব ক্কাথ বাথরুমে ফেলে;
গভীর নিসর্গ সাড়া দিয়ে শ্রুতি-বিস্মৃতির নিস্তব্ধতা ভেঙে দিত তবু
একটি মানুষ কাছে পেলে;
যে-মুকুর পারদের ব্যবহার জানে শুধু, যে দীপ প্যারাফিন,
বাটা-মাছ ভাজে যেই তেলে,
সম্রাটের সৈনিকেরা যে-সব লাবণি, লবণ-রাশি খাবে জেগে উঠে,
অমায়িক কুটুম্বিনী জানে-
তবুও মানুষ তার বিছানায় মাঝ-রাতে নৃমুণ্ডের হেঁয়ালিকে
আঘাত করিবে কোন্‌খানে?
হয়তো নিসর্গ এসে এক দিন ব’লে দেবে কোনও এক সম্রাজ্ঞীকে
জলের ভিতর এই অগ্নির মানে।