হস্তগত কাগজের তাস

আশৈশব মাথা হেঁট ক’রে রেখে নিজের প্রকোষ্ঠে
রাসভ ও মনীষীর কথা ভুলে গিয়ে
এক জন শিল্পী এক কুম্ভ গড়েছিল
যুগপৎ দেখে গেল দুয়ারে দাঁড়িয়ে

দ্রৌপদী ও নচিকেতা নিবিড় বিস্ময়ে
দুয়ারে বিড়ালও এক উঠেছিল সব অবয়ব খুলে হেসে
কিছুই থাকে না তবু- এক দিন করতালি দিয়ে
সেই অকৃত্রিম শিল্প বায়ুর ভিতরে গেল ফেঁসে

আর-এক অধিক প্রবীণতর ভারতীয়
অথবা বিবর্ণতর অন্য কোনও দেশের ভাস্কর
জীবন কাটায়েছিল বাম হাত থুতমিতে রেখে
ডান হাত বাটুলির ‘পর

হয়তো পাথর সোনা হীরক গোমেদ
কিংবা হবে- সূর্যের সাটিন-
কোনও অপরূপ পাখি গড়েছিল-
অথবা সবুজ সিন্ধু, ফিরোজা, হলুদ, নীল মীন

সৃষ্টির ও-পার থেকে নুয়ে প’ড়ে ব্রহ্মা নিজেও
দেখেছিল বেকুবের এই সব খেলা
তবু সেই পাথরের আশ্চর্য রগড়
টিকেছিল শুধু- এক বেলা।

মত্ত বায়ু কুকুরেরা সব ছুটে এল নিমেষেই
সূর্যালোকে কোলাহল ভুলে
যেখানে যে সৌন্দর্যের- আমোদের চিহ্ন পেল তারা
দাঁত দিয়ে কেটে ছিঁড়ে সময়ের ভিতরে সমূলে

ফেলে দিল- যাবৎ-না সময় নিজেই এক পিঙ্গল গাধায়
অমল ভাঁড়ের মতো অবয়ব ধ’রে
একটি খাঁচায় এক কাকাতুয়া নিয়ে
তার পেটে খোঁচা দিয়ে কুকুরের সুর বার ক’রে

হেসে নেচে খুন হল- শূন্যের ভিতর থেকে টুপি
তাহার মাথার ‘পরে নেমে এসে ঢেকে দিল টাক
আর এক বার সূর্যে তিতিরের ডিম হয়ে উড়ে
সকলকে ক’রে দিল অত্যন্ত অবাক

ভিড়ের ভিতরে এক অপ্রসন্ন শূকরকে দেখে
তাহার মাথার ‘পরে দু’ পাটি নকল দাঁত ছুঁড়ে
সমস্ত আকাশটাকে ভ’রে দিয়ে গেল-
অপূর্ব সঙ্গীতকারী ক্যানারির সুরে

সহসা সমস্ত জামা হয়ে গেল বেলুনের মতো
তামাশার প্রমত্ত বাতাসে
এক বার স্বর্গে উড়ে যায় তার দেহ
আবার নরকে নেমে আসে

এই সব ভয়ঙ্কর দ্যোতনার জন্ম হয়
যখন পুরোনো স্মৃতি- সৌন্দর্যেরা সব
এক-দিন ম’রে যেতে হবে ব’লে তবু
বর্বরের হাতে মৃত্যু ক’রে অনুভব।

তবুও বর্বর তার তরবার ফেলে দিয়ে অভিজ্ঞতায়
ক্ৰমষই বিদূষক হয়ে ওঠে- সময়ের ভাঁড়ামিতে মেতে
স্থিরতর তামাশাকে তার পর হাতের তেলোয়
আমলকী-পিণ্ডের মতো চায় পেতে

সোনালি দীপালি গড়ে নিটোল হাতুড়ি দিয়ে ক্রমে
সমস্ত স্বর্গীয় পাখি এইখানে পেড়ে যায় ডিম
এইখানে বিকেলের ফিরোজা সমুদ্র- গোল চাঁদের বেলুন-
এখানে ব্রহ্মাণ্ড স্থির- স্থিরতর বিভোর লাটিম

হয়ে যাবে অবশেষে- তাহাদের আওতায় প’ড়ে
কেননা আমোদ থেকে জন্মেছিল ফিডিয়াস- হরপ্পার গ্লাস
আনন্দের আলোড়নে- পুনরায়- আনকোরা সৃষ্টির ভিতরে
বেহুলার মতো নাচে হস্তগত কাগজের তাস।