যাত্রা

কত দিন হয়ে গেল-
কত বার কাঁচা ধান কার্তিকের সূর্যে গেল পেকে;
পউষের চাঁদে প’ড়ে ঝ’রে গেল,
খড় শুধু পৃথিবীর মুখখানা ঢেকে
র’য়ে গেল; আবার খড়ের দিন এল;
অঘ্রান চাঁদের সাদা ঠাণ্ডা শরীর
আবার দাঁড়াল এসে এই পৃথিবীর
শূন্য প্রান্তরের পাশে।
চোখ না চাইতেই বিশ-পঁচিশ বছর
হয়ে গেল; মহান বলয় নেই, নেই নেই বলয়ান্তর;
কিছু নেই; কত পাখি ছেড়ে গেছে এই শিশু জামরুল বন;
আজকের ঘুঘু ফিঙে নীলকণ্ঠ পাখি- তবু সেই সব অন্তর্হিত পাখির মতন
তাদের ভিতরে যেন কবেকার আলোকের দৌত্য আর নেই;
কোথায় হারাল সব- মননের মুহূর্তের বাতি নেভাতেই
পঁচিশ বছর আগে পৃথিবীতে;
প্রতিশ্রুতি এক দিন ছিল। তবু চারি দিকে অন্য সূচনার
অস্পষ্ট গ্লানির শব্দ শোনা যায় আজ;
নির্বিচারে গুঁড়ো-গুঁড়ো ক’রে ফেলে তবুও আবার ইঁট পাথরের ঢিবি
গড়ে ওরা বন্দরের নগরের;
এক দিন ধানখেত মাঠ চাঁদ এঞ্জিন ডাইনামো প্রপেলারের পৃথিবী
আরেক রকম যেন পরিণতি চেয়েছিল এই:
চিল হরিয়াল ভোররাত্রির যাত্রীর এয়ারোপ্লেন মেঘে
ঘর বাড়ি সাঁকো স্তম্ভ মানুষের আসাযাওয়া সারা দিন জেগে
কাজ ক’রে গেলে ব্যাপ্ত সময়কে সব
নীরবে গোছাতে দিয়ে তবু যা সত্য হয়ে ফলে
হৃদয়ে জ্ঞানের দেশে- সে প্রতিভা আভা প্রেম আশা;
নষ্ট হয়েছে; আছে যাত্রা- যাত্রা- এখনও যাত্রার ভালোবাসা।

উত্তরসূরি । আশ্বিন ১৩৫৯