কেবলই হুল্লোড় আসে

কেবলই হুল্লোড় আসে দিন-রাত
সংখ্যাহীন কালো বিড়ালের ঘ্রাণে
সকালবেলার রোদ কালো হয়ে ওঠে তার
যদি কেউ প্রান্তরেরও সুদূর সীমায়
স্থির হয়ে ব’সে থেকে পৃথিবীকে আবার বাড়াতে চায়
নিসর্গের ইশারায় আশা পেয়ে- নিজের মনের মতো ক’রে।
আমাদের কেউ-কেউ এই সব ব্যর্থতায়
সুপ্ত হয়ে প’ড়ে থাকি; কেউ আধো-মৃত
জীবনের ভিতরে মরণ নিয়ে কেউ- আত্মক্রীড় বাতাসের মতো ভেসে
কোথাও মন্দিরে গিয়ে চূড়ার উপরে চ’ড়ে ভাবি
সময়ের কাগজের চাকাকে ঘুরালে
আমাদেরও সময়ের সফলতা।

তবু আমাদের কেউ এই সব ব্যর্থতাকে পিঠে তুলে নেয়
কাদার ভিতরে এক প্রশায়িত দানবের মতো
কিংবা বামনের মতো গোল দৈনন্দিন পৃথিবীর ‘পরে
কনুইয়ের ভর রেখে চারি-দিকে আড়ম্বর চেয়ে দেখে এক বার
হাতের মুকুরে তার
আপনার পরিমাণ গলাধঃকরণ ক’রে মৃদু লেজ নেড়ে
একটি তিসি’র বীজে- মনে ভাবে- রয়ে গেছে তবে
সৈকতের বন্দরের সব কালি- দূরতম আকাশের ঘোর
নীহারিকা;- অথবা কিছুই নাই কোনও দিকে
অন্ধকার গহ্বরের কাছে এক কোণঠাসা জীবনের
নিস্তব্ধ আস্বাদ আছে বলের মতন গোল অন্ধ সজারুর
ক্ষুরধার কলমের মতো জেগে- অথবা শানিত
ডুওফোল্ড পার্কারের নিবের মতন সব কবিদের।

হে কিম্ভুত ওতপ্রোত নিসর্গের অন্যায় অমেয় নিস্তব্ধতা!
কামান, কোকিল, জ্যোৎস্না, পিশাচ, অধ্যক্ষ, উল্কি, ক্বাথ,
গন্ধর্ব, বানর, শুঁড়ি, শেয়াল, শ্যালক, শনি, স্প্রিং,
শূন্যের ভিতর থেকে জেগে উঠে সারি বেঁধে চ’লে যায়
আমাদের ইশারায় প্রাণ পেয়ে- রীলের ছবির মতো সব
ভেসে যায় তিরস্করিণী এক শিখার আবেগে
কলরব ক’রে- হেসে- করতালি দিয়ে
মূঢ় বামনের দিকে চেয়ে- যে যাহার নিরেট গহ্বরে
অঙ্গভঙ্গিমার শেষে স্নিগ্ধ হয়ে মিশে যায় মেঘের মতন
যেমন নদীর জলে যখন বালক ঢিল ছুঁড়ে ফেলে
সলিলের সমবায় নষ্ট হয় দু’-এক মুহূর্ত শুধু
আবার জলের চাকা হৃষ্ট হয়ে কেন্দ্রে ফিরে যায়
সেইখানে মর্মমূল রয়ে গেছে- কখনও মৃত্যুর নয়-
চেতনার- নচিকেতা অথবা উর্বশী, যম, তুমি, আমি, আয়ু
কাকলির পাখির মতো মুখ ব্যক্ত করে পরস্পরের দিকে চেয়ে-

সহজ সরলতম রেখাকেও গোল হয়ে ঘুরে যেতে দেখি
সকালবেলার রৌদ্রে কাঁচের গেলাসে স্বচ্ছ জল খেতে গিয়ে
গেলাসের জলের ভিতরে যারা কুকুরের মুখ দেখে
আর যারা সৃজনকে গোলাকার ব’লে জানে সকল সময়
নব-নব যুগ এসে তাদের চালায়ে নিয়ে চ’লে যাবে
রক্তের সাগর থেকে আরও দূর রুধিরের সমুদ্রের দিকে।
এই সব অযথা ভাষণ নয়,- অসম্ভব নয়।