কোকিল

চৈত্রের রাত চলেছে সাদা-সাদা মেঘ, অনেক পাতা, অনেক নক্ষত্র নিয়ে
মানুষের হৃদয়ের ঘুমকে ফুলের মতো কুড়িয়ে
নিরুদ্দেশ বাতাসের সঙ্গে অনেক দূরে চলেছে সে-

শিশির নেই, কুয়াশা নেই আজ আর, নক্ষত্র তুষারের গুঁড়ি নয়
অশ্বত্থের শাখায় পেঁচাকে খুঁজে পাই না আজ আমি
শীতের রাতে তার গানের ভিতর আর-এক রকম আস্বাদ ছিল-

আজ রাতে উঁচু-উঁচু চঞ্চল গাছ- প্রচুর ছায়া- সবুজ হাওয়ার রাতে
জামরুল-বনে জেগে আছে কোকিল- পলাশের জানালায় উড়ে আসছে সে
ঘুমাবে না সে- মৃত্যুকে সে চেনে না- আমরাও চিনি না মৃত্যুকে

তার সঙ্গে-সঙ্গে- ঘাসের উপরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া দুলতে থাকে
রাত্রিকে নারীর অতলস্পর্শ স্নায়ু ব’লে মনে হয়- মনে হয় নির্জন কঠিন খোঁপা
কোনও প্রিয়তমা নারীর: কোকিলের গানে-গানে এক বার অজস্র এলোচুলের মতো

খ’সে পড়ছে আমার আকাঙ্ক্ষার মুখ ঢেকে- এক বার ঝরাপাতার সাম্রাজ্যের ভিতর
নিরুদ্দেশ হাওয়ার সঙ্গে উড়ে-উড়ে এই ধানসিড়ি নদীর তীর থেকে
চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে

এই বেদনা… কিন্তু তবুও কোকিলের গান অপেক্ষার অপার ঐশ্বর্য জানে
স্তিমিত হৃদয়কে উষ্ণ করে, আবার তার সংহত নিটোল পথে ফিরিয়ে দেয় তাকে
সঙ্গে দিয়ে দেয় বেদনা ও অকুতোভয় আশা

কোনও এক অন্ধকারে কারু এক নগ্ন নির্জন হাত অবশেষে আমার হাতে এসে ঠেকবে
অন্ধকার রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে কোনও এক দিন
অন্ধকার রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে অবশেষে সেই এক দিন…

এই আশার ক্ষতবিক্ষত আনন্দ কোকিলের গানে মৃত্যুকে চূর্ণ ক’রে দেয়
বেদনাকে গোধূলির জাফরান সমুদ্রের মতো সুন্দর ক’রে তোলে
উঁচু-উঁচু গাছ- অন্ধকার- রাতের বাতাস ও প্রান্তরকে ক’রে তোলে মায়াবীর নদীর পারের দেশের মতো

পৃথিবীকে ক’রে তোলে উঁচু-উঁচু গাছ- অন্ধকার- প্রান্তর ও হাওয়ার মতো সুন্দর
এরা কোনও দিন ছিল না- কোনও দিন এই পৃথিবীতে ছিল না- কোকিলের গানের ভিতর থেকে জন্মেছে আজ
জন্মেছে এই অন্ধকার নরম পৃথিবী- উঁচু-উঁচু গাছ- হাওয়া- সোনালি খড়ের মাঠ

জন্মেছে অন্ধকারের আঁকাবাঁকা সিঁড়ি- উচ্চতার থেকে আরও দূর উচ্চতার দিকে চ’লে গেছে
চ’লে গেছে আকাশের বিস্তৃত নীল সমতলতার ভিতর
পৃথিবীর মৃত এক নারীকে ঘিরে যেইখানে নক্ষত্রেরা মৃদু কণ্ঠে কথা বলছে-