কোনও এক তিব্বতের-লামা

এক দিন শাঁকালুর মতো রাঙা কোনও এক তিব্বতের-লামা
ব্রহ্মের নির্জন পথে একাকী বেড়াতেছিল মেহগেনি-গাছের ছায়ায়
অনেক আগের কথা এই সব- মার্কোপোলো হয়তো তখন
প্রথম গিয়েছে চীনে- অথবা কাতর দীপঙ্কর
পরিভ্রমণ করে পুথির ফসল নিয়ে অবৈধ উর্বর
পৃথিবীতে; তখন আকাশে মেঘে তুষের রঙের মতো আলো
দেখা যায়- হয়তো-বা সিনিঙ্ পাহাড়
ভেদ ক’রে- সূর্য সাদা হলুদ সমুদ্রে
নেমে গেছে- মোমের আগুনে দগ্ধ মঙ্গোল নারীর
মূর্খ ফানুসের মতো- হয়তো হিসেবে কিছু ভুল
হয়েছিল- সনির্বন্ধ ডুবে থেকে লামার হৃদয়
সূর্য, স্বাতী, পৃথিবীর বিষুব ও অক্ষরেখাকে
ভুলে গিয়েছিল সাধু- মানুষের মূঢ় জীবনের
মূঢ়তর অনুষঙ্গ ভেবে- তা হলে পশ্চিমে সূর্য
যায় নাই- ক্রমেই ভোরের আলো দেখা গেল ম্লান
দুম্বা’র দুধের মতো সাদা- ম্লান- কেলাসিত হতেছে ক্রমেই
প্রান্তরের ঘাসের উপরে এসে প্রতিটি শিশিরে
মনে হয় রাত্রি শেষ হয়ে গেলে যেন তেপান্তর
আবার সমস্ত তারা বুকে নিয়ে পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডের
রূপে জানে- এ-সব গম্ভীর চিন্তা নিয়ে লামা যব- ফসলের
সবুজ খেতের দিকে তাকাতেই করকচের মতো সাদা মেঘ
অথবা ধূসর ঘোড়া শস্য খায়, টের পেল, খেতের কিনারে।
বিস্ময়ে এগায়ে গিয়ে দেখা গেল মাইলটাক খেতে
অনেক বিখ্যাত শস্য শেষ ক’রে ফেলে দিয়ে ঘোড়া
নিজের মুখের ম্লান ফেনার মতন নড়ে আলোর ভিতরে
দু’-এক মুহূর্ত শুধু নির্জন কৌতুকে খাবি খেয়ে
অন্তর্হিত হয়ে গেল- যেন সে ছিল না কোনও দিন
ঘোড়া’র খুরের দাগ পাললিক মাটিতে তবুও
বিঁধে আছে- যত দূর চোখ যায়- লক্ষ ক’রে লামা
ক্যারেরা পাথর দিয়ে গড়া এক নিস্তব্ধ, মেধাবী
প্যাগোডা’র আবছায়া কুয়াশায় ধূসর ঘোড়ার
শেষ বিট লক্ষ ক’রে ঢুকে গেল কৌতূহলে
ঢুকে গেল- কোথাও মানুষ নাই কোনও দিকে- ঘোড়া’র খুরের
উপবৃত্তাকার নাল একটু নির্দোষ শব্দ ক’রে
এখুনি থেমেছে যেন- ধবল জন্তুর গন্ধে হাওয়া
রয়েছে চতুর হয়ে- যেন এক উঁচু, অকৃত্রিম
ময়দানবের ঘোড়া ছিপছিপে মোমের মতন
এখুনি এখান থেকে নির্বাপিত হয়ে গেছে
নাসিকা ঝিমায়ে আসে- লামার মাথার ‘পরে শুক্লা দ্বাদশীর
রাতের শিশির মৃদু মুহূর্তের পশলায় চাতালের থেকে
ঝ’রে পড়ে- তখন মঙ্গোল তার চোখ তুলে সিলিঙের দিকে
তাকাতেই বাদামি পাথরে এক ধবল ঘোড়া’র ছবি, আহা
হুবহু চোয়াল, চুল, নাকের খোঁড়ল নিয়ে বেগে
সময়ের সাথে যেন উড়ে যায়- দেখা গেল
তবুও স্থাণুর মতো সর্বদাই রয়েছে বিভোর
ছবির কানুন, গুণ- এমন নিঃস্বার্থ অকৃত্রিম
রেখার তাড়স কেউ কোনও দিন দেখে নাই ব’লে
জ্যোৎস্না-রাতে ঘোড়া তার নিজের ছবির থেকে উঠে
ফসলের খেতে গিয়ে বুরুঝুরু গোধূমের জুস
খেয়েছিল তিন মাইল- রোজই খায় মাইল-মাইল-
এখন ভোরের বেলা চাতালের থেকে
লামা’র মাথার ‘পরে নিশীথের ঝরতি শিশির
ঝেড়ে দিল করুণায়- সন্দিহান মুণ্ডিত মাথাকে তার পর
দুই ঠ্যাঙে ঠেলে দিয়ে তিব্বতের আঁধার খোঁড়লে
আবেগে উড়ায়ে দিল লঘু ফরাসের মতো মদির আরামে।
সেই থেকে নানা রূপ কথা ভাবে পৃথিবীর সমীচীন জীব।