নক্ষত্রেরা বেলুনের মতো

চারি-দিকে নক্ষত্রেরা বেলুনের মতো যেন উড়িতেছে
হাঙরের মতো যেন ঘুরিতেছে
তবুও হাঙর নয় তারা
সতেজ ফানুস যেন
যেন তারা দুর্দান্ত রঙিন সব বেলুনের ওড়াউড়ি;
জ্ঞান নয়- জ্ঞাত নয়- আত্মা নয় তারা
কোন এক বিরাট জাপানি যেন তাহাদের গড়িয়াছে
কিন্তু সেই জাপানিরে গড়ে নাই কেউ!
তবে সে জাপানি নয়- শেলতীব্র ট্যারা শক্তি- বিদ্যুতের মতো এক ঢেউ
গর্জনের প্রেত যেন সুন্দরী গাছের নিচে- শীত-রাতে-
কান্না যেন- যদিও মরিয়া গেছে বাঘ আর ফেউ।
মনে হয় ফাল্গুনের রাত্রির বিকাশে
শুয়ে থেকে প্রান্তরের ঘাসে
চারি-দিকে পৃথিবীর জীবযোনি নিস্তব্ধতা একটি যাত্রীর মতো
বসেছে আমার পাশে নির্জন নিঃশ্বাসে
রাত্রী আরও গাঢ়- নীল- স্নিগ্ধ হয়ে আসে
অবিচ্ছিন্ন প্রান্তরের ঘাসে;
মনে হ’ল এ-পৃথিবী স্ফীত এক সমুদ্রের ‘পর
শঙ্কর বা পতঞ্জলি কোনও দিন দেখে নাই যার চরাচর
চেনে নাই যারে পীত কিংবা শ্বেত শ্বেতাশ্বতর
চিনিবে না যারে এই পৃথিবীর
কোনও দিন কোনও যোদ্ধা- নাবিকের ভিড়;
সেই স্নিগ্ধ- নিদারুণ সমুদ্রের ‘পর
আমি আর তুমি আর পৃথিবীর শতাব্দীরা করেছে নির্ভর
(পৃথিবীর স্থবিরতা আসিলেও)
জরাজীর্ণ আগামীরও বুক থেকে হারায় না যেই স্মৃতি, স্মরণের যৌবন-বয়ন
মুহূর্তে-মুহূর্তে জন্ম লয়
ফাল্গুনের সারা-দিন আতা আর আলোকের বনে-বনে
হিরামন পাখিনির মতো মনে হয়;

এই সেই পৃথিবীর সাধ আর স্বপ্ন আর সুশৃঙ্খল সাহসেরে
শক্তি আর সৌন্দর্যেরে সব
ভাসিতেছে সব এই ভয়াবহ অন্ধকার সমুদ্রের উপরে নীরব?

কবেকার মাস্তুলের দীর্ঘ ক্লান্তি নিয়ে এক লবেজান জাহাজের মতো
ভাসিতেছে এ-পৃথিবী;- ভূতুড়ে জাহাজ সব অন্ধ- অব্যাহত
শুক্র- সূর্য- বৃহস্পতি- এই সব আত্মা নয়- অচেতন যোনির উল্লাসে
এই শূন্য অন্ধকার সমুদ্রের চারি-দিকে ভাসে
শুক্র, সূর্য, শনি,
এই সব অচেতন যোনি
তাহাদের বুকে কোনও প্রশ্ন নাই, শূন্যে কোনও নাই প্রতিধ্বনি-
সেই সব জাহাজের নিরুত্তর কাঠে
একটা ইঁদুরও তার ক্ষুধা আর চিন্তা আর ব্যথা নিয়ে সময়ের বীজ নাহি কাটে
কিন্তু সব জীবাণুর
কিন্তু সব শেয়ালের ভিড়
বার-বার জন্ম দিল মাটি আর শস্য আর মৈথুনের গন্ধ-ভরা এই পৃথিবীর
নির্জন জান্তব ঘ্রাণ,- মৃত্যু আর বেদনা বধির।

যখন আকাশে জ্যোৎস্না, যখন কানন অপরূপ
এই সব শেয়ালের স্তূপ
বিবরে ঘুমায়ে থাকে হয়তো-বা
হয়তো-বা মৈথুনের কাতর তাড়সে
মাংসে শুধু মাংস-পিণ্ড ঘষে!
কুণ্ডলী পাকায়ে লেজ পরস্পর মুখোমুখি বসে
সন্তানের মতো ক’রে সময়েরে বার-বার চষে
হলুদ পাতার মতো একে-একে নিদারুণ সমুদ্রের অন্ধকারে খসে
এক-আধ বার শুধু তাহাদের এক-আধ জন
জলমুর্গির খোঁজে কাননের জ্যোৎস্নায় ঘুরিতে-ঘুরিতে
চাঁদ আর পাহাড়ের ভয়াবহ নির্জনের মুখোমুখি কেঁপে উঠে
সহসা জানিয়া লয় মানবের মন;
ধূসর কাঠের গন্ধ জাহাজের টের পায়
শোনা যায় অকাতর সমুদ্রের ধ্বনি
দেখা যায় শুক্র-সূর্য-মঙ্গলের অচেতন যোনি
বর্ণহীন আগামীরও বুক থেকে অন্ধকার সমুদ্রের উপরে নীরব?