মনে পড়ে

মনে পড়ে ভোরের ছায়ার ভিতর দিয়ে কেউ
আমার দ্বারের পাশ দিয়ে রোজ চ’লে যেত
অধীর পায়ের ইন্দ্রজালে তার ছায়ার ভিতরে ঘাস
আপনাকে জল- নদীর জলের মতো স্বচ্ছ সততায়
ঘ্রাণ ব’লে টের পেত- আকাশের শেষ নক্ষত্রেরা তার
ধূসর ফতুয়া লক্ষ ক’রে চুপে স’রে যেত
যে যাহার ঘড়ির সময়হীন স্তব্ধতার কাজে
যেন সে নিজেই কেন্দ্র অকৃত্রিম ব্রহ্মাণ্ডের
পৃথিবীকে চালাতেছে সূর্য ঘিরে- উজ্জ্বল সূর্যকে
চালায়ে নিতেছে রোজ বলের মতন ঠেলে দিয়ে
কোথায় সে চ’লে যায় রোজ ভোরে- আমি সন্দিহান হয়ে
মাঝে-মাঝে তাকায়ে দেখেছি তার শনের ঝাড়ুর মতো চুলে
একটি চিরুনি আঁটা- গোরু’র দাঁতের মতো বিশ্বস্ত, নির্মল
দাঁতগুলো- অনেক আঁচিল মুখে- এক দিন উর-বেবিলনে
যেই সব জ্যোতিষীরা বেঁচেছিল আধাে-অন্ধকার পৃথিবীর
মাটি-ঢিল নদীর জলের বিম্বে বিষয়কে খুঁজে
সে-রকম অন্বেষণ আজও এই মানুষের মুখে
ধানের খেতের পাশ দিয়ে এক তেঁতুলের বনে
মাটির তরঙ্গে চ’ড়ে পুনরায় কোটালের মাছের মতন
তরঙ্গের খাঁজে ডুবে যায়।
তখন আকাশে কোনও পাখি, কীট, তুলা
ওড়ে নাই; সূর্যের গাড়িও রসাতলে।

ঢের আগেকার কথা এই সব
সে-মানুষ ঢের আগে চ’লে গেছে পৃথিবীর থেকে;
তার পর আর কোনও মানুষের প্রাণে কোনও আশ্চর্য দ্যোতনা
দিয়ে যেতে পারে নাই; নিজের নির্জন গণ্ডি ছেড়ে
বিকেলের বায়ুর মতন ফাঁস হয়ে এই বার-
এখন আমার প্রাণ অভিযানে চ’লে যেতে গিয়ে তবু স্থির
স্থিরতর হয়ে এই হেমন্তের ভোরবেলা তিত্তিরাজ-গাছের নিকটে
অভিজ্ঞ বন্ধুর সাদা সাধারণ দিনের আলোয় ফিরে আসে
মনে হয় সে-মানুষ কোনও দিন আমাদের পৃথিবীতে তবু
বেঁচেছিল? কোথায়-বা তাকে দেখে হারায়ে ফেলেছি? কয়েকটি উদবিড়ালের
হাতে-গড়া অলীক নদীর এই পৃথিবীতে আজ আমি। স্বাভাবিক নদী
কোথায় রয়েছে, কার? আমরা এখন ঢের প্রচুর, বিশদ, অনির্বাণ
হয়ে গেছি; ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সমুৎকর্ষে- অন্তহীন এঞ্জিনিয়ারিঙে
মেতে উঠে। সেই এক বড়ো সরলতা পৃথিবীর থেকে নষ্ট হয়ে
ম’রে গেছে বহু দিন। ঋতুপরিবর্তনের দিন মৃত বাতাসের মতো কেঁপে
বিভিন্ন বিচ্ছেদ সব আমাদের প্রতি মুহূর্তেই:
মাইলের-ফিতে দিয়ে স্পষ্ট ক’রে মেপে নিতে গেলে
মাইলের জননী সে, বুঝে দেখি, দূরতম নক্ষত্রেও নেই।