মনে পড়ে সেই সব

মনে পড়ে সেই সব মানুষের কথা
সৃজনের প্রাথমিক কারণের মূঢ় জটিলতা
যাহাদের জীবনের অবসর নষ্ট করে নাই
যাহারা সাম্রাজ্য দেখে তবুও সাজে নি তার ভাঁড়
যাদের বিবাহ-রাতে বাজে নাই ডিণ্ডিম সানাই
কারণ, প্রেমকে তারা মূর্খ রৌদ্রে করে নি প্রচার

তাহাদের হাতে এসে বর্তুল- ধূসরতর- গাভীদের বাঁট
গিয়েছে প্রতীক হয়ে। নির্জন আলোয় ইচ্ছা বেঁধেছে জমাট
যখন উল্কি প’রে প্রগলভ শীতে
আঁকাবাঁকা ভুল সিঁড়ি বেয়ে
গেছে তারা দক্ষিণ সমুদ্র পাড়ি দিতে
বিংশতি স্বপ্নের মাংস খেয়ে

কাছে বাজারের থেকে এসেছে অগ্নির কলরব
শৌণ্ডিকেরা রুষ্ট ব’লে- হয়তো-বা অন্য কিছু নকল বিপ্লব
ধমনীর উত্তেজনাহীন হিম দেশে
তবুও আগুন- আগুন যখন পূর্তি চায়
খাণ্ডবের বনস্পতিদের কাছে আরও চ’লে এসে
এরা জ্বলে- ইহারা জ্বালায়

সেই সব উন্মীল অগ্নির কথা মনে পড়ে আজ
যখন রাত্রি স্তব্ধ- ঘুমে ঘোর বৈশম্পায়ন, ভরদ্বাজ
আমার মনেও কোনও নাই অহঙ্কার
আমার জানালা থেকে বিকীর্ণ আলোক
অসংখ্য পোকার কাছে যেন সারাৎসার
উপনিষদের সাদা শ্লোক

টেবিলে জ্বলেছে মোম অনেক স্নেহের চিন্তা ক’রে
তবুও যখন সূর্য জেগে ওঠে মহনীয় ভোরে
চেয়ে দেখি, এ কি, আহা, বাচকরা খুঁজে ফেরে পথ-
‘যেন বৃত্তে ঘুরে স্বর্গ- সূর্যালোকে বিখ্যাত আমোদ-‘
বুকের উপরে হাত রেখে দিয়ে সকলেরই এই অভিমত
নির্ভয়ে প্রকাশ ক’রে দূর নীলিমাকে গিয়ে করে অবরোধ।

ভুলে গেলে- নিত্যনিয়তির চোখ বুজে থেকে সব পিছনে সরালে
সকলেরে ঠেলে দেবে নিওলিথ-পৃথিবীর তুষার-যুগের মতো কালে
নেমেছে আকাশ থেকে এখন প্রসিদ্ধ অবসাদ।
সংহত যোনি আর উদরের দিন।
এর চেয়ে বেশি কিছু আত্মার সাধ
সকলের তরে আজ নয় সমীচীন।

যখন উঠেছে ব্রণ- ভয়ঙ্কর- মরণ-গ্রথিত স্নায়ু ঘিরে-
‘জমিতেছে কৃমি শুধু অভিজাত গৃহিণীর বিলোল পনিরে’
কোনও-কোনও দার্শনিক বলে
সুখাদ্য স্বাদের ঘ্রাণে অধোমুখ থেকে।
সময়ের স্রোত তবু প্রত্যাসন্ন প্রবীণ জঙ্গলে
সুশিক্ষিত মানুষকে নেউলের মতো নেয় ডেকে।

তা হলে নিভাও মোম, ভারতীয় প্রেক্ষণার রীতি
অথবা তোমার শেলফে ছিল যেই বৈদর্ভী সমিতি
বহু দিন থেকে সূর্যে- জ্যোৎস্নায়- স্পষ্ট- নিরুত্তর
ইসকুল-পালানো সব ছেলেদের মতো
মানুষের ক্লান্ত মুখে বিতৃষ্ণাকে দেখেছে উর্বর।
এ-বার গোধূম তবে- সমভাগে- সকলের তরেই ফলত।

আমার দুয়ারে যদি কার্তিকেয় এখন দাঁড়ায় ক্ষোভে এসে
অথবা নারীর দল চামুণ্ডা’র সামন্তের বেশে
তবে আমাদের ভিড় সেই সব নারী ও পুরুষ
আঘাত করেছি গিয়ে সিংহাঙ্কিত লোহার কপাটে
যেইখানে জুতো করে মানুষের নাসিকা বুরুশ
গেলাসে জলের ‘পরে যখন সে-মায়াবীর জাদুবলে হাঁটে।