অমায়িক সহাবস্থানে মানুষের মুখাবয়ব

এখানে মৎসর নিয়ে বেঁচে আছি- মনে হয়
সূর্য কোনও তীব্র প্রতিবাদ নিয়ে পূর্বের আকাশে
সহসা চলিতে গিয়ে জীবনকে নিয়োজিত ক’রে দিয়ে যায়, আহা
বীজাণুতে, নদীর জলের স্রোতে, গাধা’র টুপির ‘পরে নগরীর পথে,
খড়্গের ফলকে;- মনে হয় প্রাণ যেন স্থিরচিত্ত কোনও ফুল
তৃণ-সাগরের মাঝে- নগরীর যে-গম্বুজে লোহার শিকের ‘পরে
বসেছে ভোরের চিল,- আর নিচে ভিখিরির অব্যর্থ ঠাটের ‘পরে
রৌদ্র যেন মুকুরের মতো দীপ্ত। হয়তো-বা মুহূর্তের
ডিম্বাকৃতি মুকুরের মতো রৌদ্র- প্রেমিকের জানালায়
ট্রামের নিরেট মুণ্ডে- ফুটপাতে অজস্র প্রেতের
চোখের গহ্বরে নেমে সূর্য যেন আজও আদি সমুদ্রের
যেন দৈব তাড়নায় যেই ঝড়-জলে অন্ধকারে
প্রোজ্জ্বল পাখির ভিড়ে যেই রাত্রি- তাহা
আবেগান্ধ প্রতিযোগ; এমন অমূল্য অগ্নি মানদণ্ড
রৌদ্রের প্রান্তরে স্মিত নীলাভ ফুলের দিকে চেয়ে বোঝা যায়
এইখানে নেই কোনও অভিমান- নেই আর; আমাদের সবার চরম প্রতীক এই
বিদ্যুতের কাঁটার মতন স্পষ্ট হয় ধীরে
মানুষের অন্তিমকে যেন কোনও লুক্কায়িত কীলকের থেকে
কাছে টেনে চেয়ে দেখে- অমায়িক সহাবস্থানে মানুষের মুখাবয়বকে

এই ক্লান্ত রাসভের দেশে আজও গম: মরীচিকা;
আজও মন: মরুভূমি; প্রান্তরের বীন ফুল আজও ক্বাথ
সবাকার মাথার উপরে টুপি আজও টুপির আকার:
লোকশ্রুত ত্রিভুজের মতো; আজও প্রতিযোগ- রক্ত
তবুও গভীর অভিযান এই নিজেদের কাজ শেষ ক’রে ফেলে লবেজান
কোনও শেষ মাইলস্টোনে থামে না ক’;
মৃত্যু হয়ে প্রবঞ্চিত পথিকেরা কেবলই হতেছে লীন
মৃত ক্যাটেলগদের মতো;- কুক্ষি ছিঁড়ে উদ্গত বীজের মতো-
জীর্ণ; স্মরণীয় দীর্ঘ দিন ভ’রে এই নগরীর পথে
সময়ের বেগ সময়মলিন যেন মানুষের রক্তে ভুল সমুদ্রের মতো
টাহিটি-শিশুর বালুচর ভাঙে- সমুদ্রকাকের ভিড়ে
মৃত্যু আনে;- উপ্ত করে হাঙরের জীবনের রূঢ় তুণ্ড
রক্তিম আলোকে; তবু আরও দূরতর সংঘটন চায়।
মেঘে-রৌদ্রে-উদয়গিরির সূর্যে বিড়ম্বিত হয়ে
আপনাকে হেঁয়ালির অবতার ব’লে বুঝে।

এই সব কথা আমি নগরীর দেয়ালের অই পারে
প্রান্তরের পারে গিয়ে ভাবি-
সব স্থির হয় ধীরে-ধীরে-
চুম্বকগিরির টানে বিচূর্ণ জাহাজ
আবার নিজের সত্তা ফিরে পায়-
আমি যত প্রতিকূল হতে চাই- কান্তারের মটরশুঁটি’র ফুলে নেমে
সূর্য তার প্রিয়তম মুকুরকে রেখে যায় আমাদের তরে।
উদ্দীপিতা রমণীর মতো কোনও মহার্ঘ প্রেমের
করুণায় স্নিগ্ধ হয়ে- বিস্ফার নাসার জীব
সহসা চকিত হয়;- অরণ্যের জন্তুরা যেমন
সঙ্গমের আগে ক্রূর রোমাঞ্চিত প্রতিবাদ করে।