অন্ধকার সূর্যমন্দিরের পাশে

হয়তো-বা কোনও দূর পিরামিড দেখা যাবে- অন্ধকার সূর্যমন্দিরের পাশে
জনরবহীন বালির সমুদ্রে নেমে- বায়ুর তরঙ্গে ভুলে- একদিন-
আমাদের দীর্ঘ- দীর্ঘতম যাত্রার শেষে?
না-না-মৃত কবরের তরে আমাদের যাত্রা নয়
ভূগর্ভের অন্ধকার সুগন্ধি শয্যায় শুয়ে- নিরুত্তর- চিরদিন-
বহু সমাধান আছে- তবু মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নয়।

আবার প্রভাত এল আমাদের সহযাত্রীদের ঠ্যাঙে- মরুভূর পথে-
বেতমিজ উট পালায়ে গিয়েছে- লোল সূর্য তবু
আমাদের চালাতেছে- মাতুলের মতো হেসে
তাই বালি তত তাতে নাই
দুপুরের আলাপী বাতাসে কোনও এক নিকটের নগরীর কসাইখানার ঘ্রাণ
আমাদের প্রাণে এসে বলে গেছে- ‘তোমরা দানব নও
হে নিগূঢ় মানবিক অনুধ্যান, মানুষকে অনুভব কর’-
অনুভব?- সন্ধ্যায় নগরীর কোনও গণিকার ঘরে
মানবীকে স্পর্শ করা যাবে:
আমাদের ভিতর থেকে কেউ কেউ হঠাৎ উঠিল ব’লে
তাহাদের এই আকস্মিক অন্যায় আক্রোশে কসাইখানার ঘ্রাণ
আরও যেন গূঢ়তর হয়ে বেড়ে গেল
আমরা কি অন্ধকার রৌরবের দিকে চলিতেছি?
মনে হল নগরীর নিশীথে তবুও:
আজও কারা জেরুজালেমের দিকে চলিতেছে?
আজও কারা জেরুজালেমের দিকে

হয়তো আর একবার তথাগত জন্মিবার সময় এসেছে
তাই সেই শিশুটির নিরুদ্দিষ্ট ব্যাসের প্রতিভা
কাহাদের কেরোসিন কয়লামলিন মুখে দিনরাত- তবু- এক উষার মতন?

বুঝিতে
বিচার করিতে গিয়ে
ক্ষমাহীন ধৃষ্টতায় আমাদের মর্মান্তিক তৃষ্ণা পেল
এইসব নিরালম্ব মোমপায়ীদের দেশে
আমাদের ক’জনার তরে জলবিম্বও নাই

কঠিন সূর্যের রাত
নগরীর যুবকেরা কমলালেবুর ফালা বরফে মিশায়ে সহসা আনিত যদি
কিন্তু তারা- তাহাদের জননীরা- পিতামহ- প্রপিতামহেরা
অন্যতর গৈবি পানীয়ের দিকে চলিতেছে দিনরাত-
তৈমুরের মতো খোঁড়া পায়ে- ভাড়াটে উটের মতো তিক্ততা

আমাদের কারও কারও আপ্লুত মুখের হাসি গিয়াছে শুকায়ে বহুক্ষণ
আরও শুষ্ক তালু- জিভ-
তবু তারা সহসা নগরী ছেড়ে অন্য কোনও দিকে গেল না ক’ আর
সারাদিন রাজকন্যার- একটি ইঁদুর আছে যার- মুখোমুখি পাশা খেলে
সারারাত সরাইখানার ভিড়ে ভিড় হয়ে
খনির অনৃত রঙ উল্কির মুখে কেটে
পুরজেষ্ঠ্যদের কাছে ভিক্ষা চেয়ে
তবে তারা আমাদের প্রভাত সূর্যের মরুভূক্যাম্পের গৃহদেবতাকে
উপহাস করে ভুলে গেল।