অনেক ধারণা ছিল

অনেক ধারণা ছিল আমাদের হৃদয়ের সন্ধিস্থলে- এক দিন
মনে হত যেন তার জরায়ুজ জীবনের অবশেষ
হয়তো হয়েছে ক্রমে- হয়তো পেয়েছে এক নীড়
তার পর এক দিন দেখা যাবে সাদা এক মহার্ঘ পাখির
ডানার ভিতর আর নাই কোনও মূঢ়তার লেশ
মাথার উপরে- ঢের দূরে যেন সারসের দেশ
আমাদের প্রত্যাসন্ন জীবনের প্রতীকের মতো
ডানার সমতা রেখে বজ্রে আর নীলাকাশে স্থির হয়ে রয়েছে ফলত

মনে হত আমাদের পূর্বজেরা আয়ুদোষে দেখে নাই যেই সঙ্গতির আবির্ভাব
দূর প্রতিধ্বনিলোক যেই অবহিত চাটুকারদের কাছে ব’সে
নিজেদের সমর্পণ করেছিল;- বহু দিন সেই সব আস্তরের সাধ
যেই সব গভীর উৎকোচে এই পৃথিবীর জীবাত্মারা গণে নি প্রমাদ
সেই সব বড়ো চীন-প্রাচীরের প্রণয়ন ধ্ব’সে
পড়িতেছে ধীরে-ধীরে- এই বার বিচারক অভীষ্ট সাহসে
অনেক বিশ্রুত গল্প- অন্ধকারে- শেষ হলে পরে
হয়তো-বা আমলকী সপ্রতিভ হাতের ভিতরে
তুলে নিল;- ক্রমে-ক্রমে মানুষের নতুন অভ্যাস
ধীমানের টেবিলের স্থির মোমদণ্ডের মতন
নিজের সংহত মেধ ক্ষয় ক’রে আলোককে কিছু দেবে জয়
কিছু দেবে মনীষাকে (না হলে অগ্নির কাণ্ড শুরু হবে লাক্ষাগৃহময়)
যে-মানুষ নিতলের প্যারাফিন’এ রুদ্ধ ক’রে রেখেছিল মন
অন্ধকারে; যার কথা এক দিন ভেবেছিল পুলস্ত্য, চ্যবন
বুদ্ধ, প্লেটো, জৈমিনি, নিম্বার্ক, তৈত্তিরীয়, শ্বেতাশ্বতর
তবুও সম্পূর্ণ ভাবে এই সব স্বর্ণবীজ-বুদবুদে রাখে নি যে কনুইয়ের ভর

তার এই হিরেকষ পিচ্ছিলতা
(তাহারে দেয় নি হতে পিঞ্জরের শুকাত্মার মতো)
এত শতাব্দীর পরে তবু লড়ায়ে মেষের মতো
(হয়তো তাদেরও চোখে সর্ষে’র বিভ্রম)
বোধ হয়েছিল যেন মানুষ র’বে না অসক্ষম
সময়ের কোথাও ভূতের ভিড়ে চোখে নিয়ে সর্ষে’র বিভ্রম
সূচের মতন ঢুকে ফাল হয়ে বেরুতে ফলত
এ-সব করুণ চিন্তা এক দিন আমাদের করেছিল গ্রাস
সময়ের স্থিতিস্থাপকতা তবু অস্ত্রের চেয়েও অবিনাশ।