অনেক মৃত বিপ্লবী স্মরণে

তারা সব মৃত।
ইতিহাসে তবুও তাদের
কেবলই বাঁচার প্রয়োজন ব’লে
তাদের উত্তর-অধিকার
কোনও কোনও মানবের হাতে আসে।
তারা ম’রে গেছে।
সবারই জীবনে আলো প্রয়োজন জেনে
সকলের জন্যে স্পষ্ট পরিমিত সূর্য পেতে গিয়ে
তবুও বিলোল অন্ধকারে-
তারা আজ পৃথিবীর নিয়মে নীরব।

এই অই ব্যক্তির জীবনে
সুসময় শুভ অর্থ পরিছন্নতার
প্রয়োজন র’য়ে গেছে জেনে নিয়ে তারা,
তবুও ব্যক্তির চেয়ে ঢের বেশী গহন স্বভাবে উৎসারিত
জীবনবিসারী ক্ষুব্ধ জনতা-সমুদ্র দেখেছিল।
সেইখানে এক দিন মানুষের কাহিনী জন্মেছে;
বেড়ে গেছে;
কাহিনীর মৃত্যু হয় নাই;
কাহিনী ক্রমেই ইতিহাস।
জীবনধারণে- জানি- তবু-
জীবনকে ভালো ক’রে অর্থময় ক’রে নিতে গিয়ে
ইতিহাস কেবলই আয়ত হয়ে আলো পেতে চায়।
নিজেদের আবছা ব্যক্তির মতো মনে করে তারা,
ইতিহাস স্পষ্ট ক’রে দিতে গিয়ে তবু,
আজ এই শতকের শূন্য হাতে শূন্যতার চেয়ে বেশি দান
দিয়েছিল হয়তো-বা।
দেয় নি কি ?
আজ এই হেমন্তের অন্ধকার রাতে
আমরা বিহ্বল ব্যক্তি- তুমি- আমি- আরও ঢের লোক;
মানুষ-সমুদ্রে ঠেকে অন্ধকার বিম্বের মতন
তবুও সবার আগে নিজের আকাশ
নিজের সাহস স্বপ্ন মকরকেতন
আপনার মননশীলতা
গণনার প্রিয় জিনিসের মতো মনে ভেবে নিয়ে
অন্য সকলের কথা ভুলে যাই।

সকলের জীবনের শুভ উদযাপনের চেষ্টায়
সূর্যের সুনাম আরও বড়ো ক’রে দিতে গিয়ে তারা
নিজেদের বিষণ্ণ সূর্যের কথা ভুলে গিয়েছিল।
মানবের কথা বিরচিত হয়ে চলে-
সেই সব দূর আতুর ভঙ্গুর সুমেরীয় দিন থেকে আজ
জেনিভায়- মস্কো- ইংল্যান্ড- অতলান্তিক চার্টারে,
ইউ.এন.ও-এর ক্লান্ত প্রৌঢ়তায়- সতর্কতায়,
চিন- ভারতের- সব শীত-পৃথিবীর
নিরাশ্রয় মানবের আত্মার ধিক্কারে- অন্তর্দানে।

হেমন্তের রাত আজ ক্ষুব্ধতায়- জনতায়- নর্দমায়- ক্লেদে
লোভাতুর ক্রূর রাষ্ট্রসমাজের রতির নৈরাজ্যে
অসম্ভব অন্ধ মৃত্যুতে
ফুরোনো ধানের খেতে তবু
মৃত পঙ্গপালদের ভিড়ে
নরকের নিরাশার প্রয়োজন র’য়ে গেছে জেনে, তবু বলে:
‘গভীর- গভীরতর তবুও জীবন-
নিজেদের দীনাত্মা ব্যক্তির মতো মনে করে ওরা
সকলের জন্যে সময়ের
সুন্দর, সীমিত আলো সঞ্চারিত ক’রে দিতে গিয়ে
প্রাণ দিয়েছিল।

জীবনধারণে, তবু জীবনের আরও বর্ণনীয়
ব্যাপ্তির ভিতর দিয়ে আরও সুস্থ- আরও প্রিয়তর
ধারনায় ইতিহাস- ইঙ্গিতের আরও স্পষ্টতায়;
তবে তা উজ্জ্বল হ’লে জীবন তবুও
নিরালোক হয়ে রবে কত দিন?
কত দিন হ’তে পারে!’

(ক্রান্তি। কার্তৃক ১৩৫৪)