অনুপম ত্রিবেদী (সংযোজিত)

এখন শীতের রাতে অনুপম ত্রিবেদীর মুখ জেগে ওঠে।
যদিও সে নেই আজ পৃথিবীর বড়ো গোল পেটের ভিতরে
সশরীরে; টেবিলের অন্ধকারে তবু এই শীতের স্তব্ধতা
এক পৃথিবীর মৃত জীবিতের ভিড়ে সেই স্মরণীয় মানুষের কথা
হৃদয়ে জাগায়ে যায়; টেবিলে বইয়ের স্তূপ দেখে মনে হয়
যদিও প্লেটোর থেকে রবি ফ্রয়েড নিজ-নিজ চিন্তার বিষয়
পরিশেষ ক’রে দিয়ে শিশিরের বালাপোশে অপরূপ শীতে
এখন ঘুমায়ে আছে- তাহদের ঘুম ভেঙে দিতে
নিজের কুলুপ এঁটে পৃথিবীতে- ওই পারে মৃত্যুর তালা
ত্ৰিবেদী কি খোলে নাই? তান্ত্রিক উপাসনা মিস্টিক ইহুদি কাবালা
ঈশার শবোত্থান- বোধিদ্রুমের জন্ম মরণের থেকে শুরু ক’রে
হেগেল ও মার্কস্: তার ডান আর বাম কান ধ’রে
দুই দিকে টেনে নিয়ে যেতেছিল; এমন সময়
দু’ পকেটে হাত রেখে ভ্ৰূকুটিল চোখে নিরাময়
জ্ঞানের চেয়েও তার ভালো লেগে গেল মাটি মানুষের প্রেম;
প্রেমের চেয়েও ভালো মনে হ’ল একটি টোটেম:
উটের ছবির মতো- এক জন নারীর হৃদয়ে;
মুখে-চোখে আকুতিতে মরীচিকা জয়ে
চলেছে সে; জড়ায়েছে ঘিয়ের রঙের মতো শাড়ি;
ভালো ক’রে দেখে নিলে মনে হয় অতীব চতুর দক্ষিণ-রাঢ়ী
দিব্য মহিলা এক; কোথায়-যে আঁচলের খুঁট;
কেবলই উত্তরপাড়া ব্যাণ্ডেল কাশীপুর বেহালা খুরুট
ঘুরে যায় স্টালিন, নেহেরু, ব্লক, অথবা রায়ের বোঝা ব’য়ে,
ত্রিপাদ ভূমির পরে আরও ভূমি আছে এই বলির হৃদয়ে?
তা হ’লে তা প্রেম নয়; ভেবে গেল ত্রিবেদীর হৃদয়ের জ্ঞান।
জড় ও অজড় ডায়ালেকটিক মিলে আমাদের দু’ দিকের কান
টানে ব’লে বেঁচে থাকি- ত্রিবেদীকে বেশি জোরে দিয়েছিল টান।

[১৯৫৪ সালের সংস্করণে সংযোজিত]