পৃথিবীর সর্বনাশ

সে-দিন তাদের চূর্ণ কেন যেন ছিল উজ্জ্বল
(বেশি জ্যোতি, মনে হয়, ছিল চশমায়)
যখন সে-সমিতির তীক্ষ্ণ রাতে তাহাদের সাথে
তর্কের টেবিলে পরিচয়

প্রথম ঘনিষ্ঠ পরিচয় হল
বাইরে ঝাউয়ের ডাল ঘেঁষে
চ’লে গেছে বিজৃম্ভিত টেলিগ্রাফ-তার
একটি চিলের কান্না- তুলোর বলের মতো ফেঁসে

অবশেষে ক্রমে-ক্রমে মিহিন সূতার
অবয়ব পেয়ে যেত ন্যূব্জ কুয়াশায়
সে-সবের দিক থেকে চোখ তুলে নিয়ে
হেমন্তকে স্থির ভাবে বোধ করা যায়

এই- সেই- আর অই মানুষের মুখে
গভীর অশ্রদ্ধা দেখে- নিবিড় অপ্রীতি
সবের পায়ের নিচে নরকের ধূমা আছে ব’লে
চুরুটেরও ধোঁয়া আনে অকৃত্রিম ভীতি

এরা কেউ জীবনের যোদ্ধা কিছু নয়
আমাদের ঘিরে কিছু (সেই দিন) ছিল না মড়ক
আমোদকে নিয়ে শুধু ক্রীড়া ক’রে গিয়ে
আমাদের মাঝে কেউ অব্যর্থ উত্তম বিদূষক।

সে-দিন ছিল না তবু- আজও নেই কেউ-
তবু কারু ডোরা-কাটা কামিজের দিকে চেয়ে থেকে
মনে হত প্রতীক সে- আমাদের মূঢ় জীবনের
সাতটি বামন যেন এক জন অপ্সরিকে ডেকে

কাটায় হেমন্ত-রাত পৃথিবীর মধ্য-পথ জুড়ে
নালায় গুদামে জন্ম তাহাদের সকলের- ইন্ধনের, পিতৃপুরুষের
সমস্ত সুদীর্ঘ দিন ভ’রে তবু তারা
গড়েছে- ভেঙেছে রোম- বেবিলন- ক্ষ্মের।

শীর্ণ রাতে টেবিলের তর্ক তবু কোনও বস্তু নয়
কাঁচের গেলাসে জল হলে হয়ে যেত যদি নদীর রূপক
তবু সেই নিঝরের জলে ঘুরে আমাদের আসন্ন হৃদয় জেনেছে কি
চাপেলি-মাছের প্রেম খেয়ে ফেলে ক্ষুধাতুর বক?

টেবিলের ল্যাম্প ঘিরে অগণন শ্যামাপোকা এসে
কারু-কারু নাসিকায় পুনরায় মরণের ঘ্রাণ
রেখে যেত- তবুও নাকের আগে মানব-হৃদয়
খড়ি ও ভস্মের জন্মস্থান

অনুভব ক’রে যেত অপ্সরির দিকে চেয়ে থেকে;
তবু সেই সাত জন বামনের কপালের ‘পরে
এমন কী সমুজ্জ্বল বিম্ব পড়েছিল
লুপ্ত হল ব’লে আজ পৃথিবীর সর্বনাশ ক’রে।