ঢের দীর্ঘ পথ যেন

ঢের দীর্ঘ পথ যেন বিকেলবেলায় শব্দহীন ধুনুচি’তে মেঘের ধূসর ভষ্মে
শেষ হয়ে আসে
কোনও ঘ্রাণ নাই আর কোনও দিকে
কোনও পাশাপাশি পর্বতের শৃঙ্গে কোনও সরাইখানার কলরব শোনা যায় না ক’
কিংবা আছে- মোরা আর শুনি না তা
আমাদের সুদীর্ঘ দিনের এই অগ্রসর- সভ্যতার আশা
সেইখানে বেলোয়ারি গেলাসের রূপ ধ’রে হাতে-হাতে আপনারে লুফিতেছে
বারবনিতার মতো মিথ্যা এক উজ্জ্বলতা নিয়ে, অবদমনের ব্যথা নিয়ে
ফাঁপা এক ফানুসের মতো অন্তর্গত শূন্যতার অন্ধকারে
দু’ দণ্ডের মোম জ্বেলে
‘তোমরা বধির আজ’ এই ভেবে আমাদের কানের পটহে
স্থূল শপথের শব্দ- অন্ধকার অজ্ঞাত প্রবাদ পৃথিবী মারিছে ছুঁড়ে রূঢ় উচ্চ রবে;
তবুও বধির নই; মরণের মুখোমুখি ব’সে শান্ত মনে
জীবন-নদীর জল খেতে হলে
যেই স্থির, যেই তন্বী, দূর অনুভূতি চাই
কে তারে হারাবে আজ এই ক্লান্ত ধূমাময় অবিরাম শপথের দেশে।
কাঁধের উপরে হাত রেখে যেন কারা বলে অন্ধকারে:
‘তার পর প্রেয়সীর মুখ ক্লান্ত ঘোটকী’র মতো হয়ে যায়
করুণার দেবতারা তাই এইখানে নেমে আসে
মোদের মননশীলতারে গাঢ় ক’রে
কিন্তু তবু আমরাও মিশরের বিজ্ঞদের মতো ভালোবাসি আমাদের নরনারীদেহকোষ
এই স্বাচ্ছন্দ্যেরে
বিচিত্র বিজ্ঞান মোরা গ’ড়ে যাব মানুষের দেহ পূজা ক’রে
বিতর্কের কাক-চক্ষু জল খেয়ে মোরা
শুধাই, কোনও অসম্ভব অজ্ঞান আনন্দ আছে মানুষের তরে কাল?
কোনও বিমূঢ় হতাশা আছে?-
এই সব প্রশ্ন নিয়ে সমবায় গ’ড়ে ওঠে- সচকিত মানুষেরা কথা ভাবে।’

আজ তবুও কোনও সংঘর্ষের কাছে এসে দাঁড়ায়েছি যেন
কোনও গ্রহ যেন আন্তর্নাক্ষত্রিক শূন্য হতে পৃথিবীরে সহোদরা ভেবে
গাঢ় আলিঙ্গন দিতে আসিতেছে।
তার চেয়ে আরও স্তব্ধ অন্ধকার আলিঙ্গন আছে
আমাদের ফুটপাথে- প্রকোষ্ঠের থেকে যেন কুয়াশার মতো জন্মিতেছে।
শহরের কোনও কেরোসিন-কুপি অন্ধকার নর্দামার থেকে উঠে
তে’তলার মেহগনি-কাঠের টেবিলে- পেয়ালার এনামেলে
অপহৃত, কোনও এক দেউলিয়া সার্কাসের ভাঁড়ের মতন
বক্র হাসি রেখে যায়
মৃত্যুর চেয়েও যেন খল- শব্দহীন-
কী চায় সে?- চায়ের টেবিল- জ্যাম- ডাল- ভাত-
কোনও এক গণিকার সমুজ্জ্বল স্বয়ম্বর-সভা?
আরণ্যক উপনিষদের পাতা, আহা?
মানুষের হৃদয়ের গভীর রহস্য
সমস্ত নক্ষত্রগ্রহেরে যেন লকেটফলের মতো করতলে নিয়ে
নর্দামার অন্ধকারে শুয়ে প’ড়ে থাকে তবু- একা-
কোনও দ্বিতীয় জীবন তারে বুঝিবে না
প্রতি দ্বিদলের মাঝখানে অন্ধকার সময়ের সিন্ধু যেন
আলপিন-শীর্ষে শুয়ে কাঁদিতেছে- সীমাহীন, সৈকতবিহীন।