প্রবালদ্বীপে দুই মুহূর্ত

বিস্রস্ত সময় আজ আমার নৌকার কর্ণধার
অথবা পৌঁছেছি আমি সমুদ্রের রূঢ় অন্ধকারে
সেই দ্বীপে- যাহার চেহারা যেন নৃসিংহআকার
বায়ুভূত নৃমুণ্ডকে চায় বারেবার

আমার পকেটে যদি সেই মুণ্ড থাকে
তা হলে কাঁধের ‘পরে রয়েছে নিরিখ
নিবিড় আমোদ এক- জীবনের সব তামাশাকে
তামাশা পেরিয়ে গেলে ধ’রে ফেলে ঠিক-

এসেছি অদ্ভুত দ্বীপে আজ তবু
বহু বৎসরের বায়ু বিতাড়িত হয়ে
প্রবালের অস্থিদ্বীপ সমুদ্রের নিটোল প্রতিভূ
এক দিন মনে হত;- তার পর নানাবিধ অগ্নি গেছে ব’য়ে

নানাবিধ অগ্নি-সূচি, কৃশাঙ্গ অঙ্গার
আমার মাথার ছিদ্র দিয়ে
প্রবালের বদ্বীপের হৃষ্ট অহঙ্কার
এই বার যেতে পারে আমাকে ছাড়িয়ে

আমার প্রমত্ত আয়ু আজ এইখানে
লাল নীল পাথরের অগ্নির মতন
নিভে যদি কালো হয়ে যায় অভিমানে
অথবা ধবল এক ঘোড়া’র উপরে যদি করে আরোহণ

আমার বিমুক্ত বায়ু- করতালি- করতালি দিয়ে নেচে উঠে
মানুষের কালো হাড় প্রবালের জ্যোতির্ময় অস্থিতে ছুঁড়ে
তা হলে সে এক হৃষ্ট ঘোটকের মতো হত- সেই বিষ
সেই স্বপ্নবিষবিম্ব (আগাগোড়া) জীবনের (দ্বিরঙ্গরঙ্গের মতো) সত্যের লেজুড়ে

সে-সব বিতর্ক আমি আপাতত প্লাঙ্ক- পতঞ্জলি
মননবিলাসী সব উপনায়কের হাতে দিয়ে
এখন বেড়াব এই বদ্বীপের মূর্ত অলিগলি
বিজড়িত জীবনকে মৃত আর জীবিতের কাপড়ে জড়িয়ে

অনেক মৃতের কথা আজ মনে পড়ে
যাদের দেখেছি আমি যৌবনের প্রথম পলকে
দেহ যেন কৃকলাস- তবু তারা অগ্নিশীর্ষে চড়ে
মৃৎকার্পাসের মতো সব তাহাদের চিত্তের ফলকে

পেয়েছি অগ্নিকে আমি চির-দিন
জীবনের সব তুচ্ছ- বৃহৎ ব্যাপারে
যাহারা হংসী’র মতো অভিমানহীন
ব্রহ্মা’কেই জন্ম দেয় ডিম্বের আকারে

বিনষ্ট ডিমের স্মৃতি সূর্যউদয়ের সাথে ভুলে
উজ্জ্বল ডানায় ওঠে আবর্তিত হয়ে
তেজস্ক্রিয় তুলোর বলের মতো ফুলে
চ’লে যায় ঘনতর মাংসের বিষয়ে

(শেয়ালের অজ্ঞাত) গভীর উন্মুখ মন তাহাদের
নদীর সমস্ত জল-মহাভূত স্বপ্নে করে
ঔজারিক নয় কোনও আদি কারণের
স্বপ্নেরও- স্বপ্নেরও নয় ক্রীতদাস

চক্রবর্তী- মজুমদার-
খাস্তগির- সেন-
সেই সব মৃতদের মুণ্ডগুলো
আমার হৃদয়ে আজ উদ্ৰিক্ত টোটেম

তাহারা রাষ্ট্রের কাছে জানায় নি দাবি
যেমন বাতাস মৃত জয়ন্তী’র বনে
কোনও দিন চায় না ক’ ভাঁড়ারের চাবি
কারণ, রয়েছে সব নখদর্পণে

ঘূর্ণমান; একটি ইটকে নিয়ে ক্রমে-ক্রমে গ’ড়ে তোলে যারা বেবিলন
কিংবা প্রত্যাদিষ্ট হয়ে যেই ভূতাবিষ্ট কর্মীর দল
জুতো খেয়ে রাসভের চামড়াকে করে সংরক্ষণ
এ-সবের চেয়ে ছিল তাহাদের পরমায়ু ঢের হিম, বরফউজ্জ্বল।

আমার প্রমত্ত আয়ু আজ এইখানে
লাল নীল পাথরের অগ্নির মতন
নিভে যদি কালো হয়ে যায় অভিমানে
অথবা ধবল এক ঘোড়ার উপরে যদি করে আরোহণ

আমার বিমুক্ত বায়ু- করতালি- করতালি দিয়ে নেচে উঠে
মানুষের কালো হাড় প্রবালের জ্যোতির্ময় অস্থিতে ছুঁড়ে
তা হলে সে এক হৃষ্ট ঘোটকের মতো হত- সেই বিষ
সেই স্বপ্নবিষবিম্ব (আগাগোড়া) জীবনের (দ্বিরঙ্গরঙ্গের মতো) সত্যের লেজুড়ে

সে-সব বিতর্ক আমি আপাতত প্লাঙ্ক- পতঞ্জলি
মননবিলাসী সব উপনায়কের হাতে দিয়ে
এখন বেড়াব এই বদ্বীপের মূর্ত অলিগলি
বিজড়িত জীবনকে মৃত আর জীবিতের কাপড়ে জড়িয়ে।