রেনকোট কাঁধে রেখে

রেনকোট কাঁধে রেখে শহরের রাস্তায় কত বার নেমেছি-যে রাতে
কত-যে গভীর রাতে হেঁটেছি হেঁটেছি শুধু স্তব্ধ গ্যাসপোস্টদের সাথে
কেবল গিয়েছি চ’লে পিছল পথের থেকে আরও দূর অন্ধকার পথে
গলির ঘুঁজির ফাঁকে- ডাস্টবিন ইঁদুরের বিড়ালের আড়ষ্ট জগতে
কত-যে গভীর রাতে-রাতে
হেঁটেছি হেঁটেছি শুধু গ্যাসপোস্টদের সাথে

হাইড্রেন্ট খুলে গিয়ে কুষ্ঠরোগী ধুয়েছে নীরবে ক্লেদ-শরীর তাহার
গ্যাসের আলোর দিকে চেয়ে আছে ঘোলা চোখ হিম কাঠ মৃতবৎসার
লেড়ি-কুকুরের ক্ষুধা পথ থেকে পথে-পথে মিটে যায় ট্যাক্সির নিচে
চেয়ে দেখি চূর্ণ তার দাঁত মুখ নিঃসহায় নক্ষত্রের দিকে আছে খিঁচে
হেঁটেছি হেঁটেছি শুধু স্তব্ধ গ্যাসপোস্টদের সাথে

অবসন্ন ট্রাম বাস্ কলের পৃথিবী সব তখন গিয়েছে চ’লে ঘরে
তবুও মানুষ- সে-যে কল নয়- পথ থেকে আরও দূর পথের ভিতরে
একা-একা চ’লে যায়- যত দূর স্তব্ধ এই শহরের গ্যাসপোস্ট চলে
কী যেন কীসের তরে হাঁটিয়াছি- হেঁটে-হেঁটে এক দিন ক্লান্ত হব ব’লে?
কত-যে গভীর রাতে-রাতে
হেঁটেছি হেঁটেছি শুধু স্তব্ধ গ্যাসপোস্টদের সাথে

তবুও কোনও ক্লান্তি নাই- কী-যে চাই গাঢ় রাতে মিনোটার-মিনারের পাশে
একেলা দাঁড়াই গিয়ে- নক্ষত্রেরা মুখোমুখি দাঁড়ায়েছে কঠিন আকাশে
বাতাসে ভাসিয়া আসে ধুলো খড় হিম হাওয়া এক ফোঁটা আধ-ফোঁটা জল
আমারে কে ডাকে যেন! কেউ নাই; হাওয়া শুধু কথা কয় কেমন বিহ্বল-
হেঁটেছি হেঁটেছি শুধু স্তব্ধ গ্যাসপোস্টদের সাথে

চুরুট জ্বালাই চুপে; এখন কত-যে রাত- আকাশ ভরেছে ছেঁড়া মেঘে
সারা-রাত জলে-জলে ভিজে ফিরি প্রণয়িনী ডাহুকীর মতন আবেগে
কার সাথে প্রেম তবু? কে-বা সে-ই? কারে আমি ভালোবাসি নক্ষত্রের তলে!-
বেবিলনে তারে আমি দেখিয়াছি- আজও তার লাগি আমি ভিজি জলে-জলে
কত-যে গভীর রাতে-রাতে
হেঁটেছি হেঁটেছি শুধু স্তব্ধ গ্যাসপোস্টদের সাথে।