সবারই হাতের কাজ

সবারই হাতের কাজ শেষ ক’রে নিতে হবে পৃথিবীতে আজ।
তাদের ভিতরে তবু (মুষ্টিমেয়) কেউ-কেউ ভালো ক’রে-ক’রে;
তাদের রুধিরে আছে জীবনের সম্পূর্ণ গরজ
সবই অভিনয় জেনে- বিখ্যাত মঞ্চের ‘পরে (তবুও তো) চড়ে।
ভালো ক’রে প’রে নেয় অবিকল কালো পরিধান;
সেখানে ক্কচিৎ প্রেম সততা মহত্ত্ব আছে অগণন দালালের বুকে
যেখানে ক্কাথের দিকে চেয়ে ভাঁড় ব’লে যায় ‘অনোরণীয়ান’
দার্শনিক গাধা ব’লে ফেঁসে যায় দু-এক চাবুকে,
সেখানে তবুও তারা চাঁই সাজে, মন্ত্রী হয়- মুদ্রারাক্ষস
কিংবা শ্লীল প্রেমিকের খেলা খেলে দগ্ধ করে চাঁদনীর চক;
কানে ধ’রে টেনে এনে ইহাদের মাথার তাড়স
বার ক’রে দিতে চায় অতি সন্দিহান বিদূষক;
তবুও বিয়োগনাট্যে প্রদীপ্তির কাজ করে যারা
টেবিলে ভাঁড়ের সাথে কাসুন্দিতে প্রায়শই পেয়েছে আমেজ,
তবু জানে নিজেদের পরিধানে গুরুতর বিষয়ের জামা,
ভাঁড়ের ধুতির ভাঁজে লুকায়ে রয়েছে শুধু লেজ।

এই পরিপূর্ণ জ্ঞানে বোঝে তারা তাহাদেরও মেরুদণ্ড বেয়ে
ব্যাঙাচির মতো কিছু সততই ন’ড়ে যায় ধীরে;
এ না হ’লে অনিরুদ্ধ, কৌটিল্য ও কর্ণ, দেবযানী
ভূত হ’য়ে মিশে যেত কোন্ কালে নাট্যের তিমিরে
এখনো অঙ্গার থেকে জন্ম নেয় এই সব বীজ;
চেয়ে দ্যাখে ঊর্ধ্বে মেঘ- সম্মুখেতে সিংহ মেঘ ষাঁড়
পায়ের ভঙ্গির নীচে কৰ্কট বৃশ্চিক
পাদপ্রদীপের আলো কেবলই খেতেছে অন্ধকার।
নাট্যের লিখন তারা- তবু তারা পড়েছিলো মৃগশিরা নক্ষত্রের নীচে,
কথোপকথন গান স্বগতোক্তি নেপথ্যের রব
শিশিরবিন্দুর মতো শব্দ করে দর্শকের কানে;
গ্যালারিতে মৃগীরোগাতুর নীল মহিলারা সব
কলরব ক’রে ওঠে ভয়ংকর করতালি দিয়ে
চামুণ্ডার মতো নেচে ছিঁড়ে ফেলে চুল
মাথার উপরে সব অগণন ভূতযোনি দেখে
তারা আর তাহাদের প্রণয়ীরা নাচায় লাঙ্গুল;
অতএব যবনিকা মাঝপথে নেমে পড়ে বটে
ম্লান হ’য়ে নিভে আসে পাদপ্রদীপের গোল আলো,
তবুও মঞ্চের ‘পরে অনিরুদ্ধ দেবযানী কচ
নিজেদের ভাষা ভেঙে একটুও হয় না দাঁতালো।

[ময়ুখ। অগ্রহায়ণ ১৩৬৫]