সোমনাথ সেন

পিতৃপুরুষের থেকে টাকা, নারী, মানুষের বিস্তৃত ইচ্ছার
সমস্ত খোরাক পেয়ে নিজেকে গুছায়ে নিল সোমনাথ সেন
কী আর সে পেতে পারে- মানুষের হৃদয়ের অগ্রিম আকাঙ্ক্ষা
অধিক কোথাও কিছু চেয়েছিল না কি আর! ছড়ি হাতে ক’রে
সহসা গ্যারাজে ঢুকে (ঘুমে-ঘোর মূঢ় শ্যোফারের
পিঠে দু’টো খোঁচা দিয়ে) দিবসের যে-কোনও সময়ে
মোটর ঘুরায়ে নেয়- যেই দিকে চোখ যায়- যেই সব ছিমছাম পথ
ভালো লাগে- তবুও সে কোনও দিন নগরীর বার’এ
প্রবেশ করে নি আজও।
যেইখানে ডোরাকাটা জামা-গায়ে হৃষ্ট বিদূষক
মাথায় গাধার টুপি এঁটে নিয়ে কুকুর, সম্রাট, নক্ষত্রের
নাড়ি ও নিখাদ খাদ নিয়ে তবু ঘুমাতেই ভুলে গেল অবশেষে
প্রথম মৃত্যুর মতো ঘুমে।
সে-সব পথের থেকে ঢের দূরে সোমনাথ; মানুষের বিরাট সংখ্যাকে
সর্বদাই শ্রদ্ধা করে- সমাজের অগণ্য কোটরে
সংখ্যাতীত বাদুড়কে দেখে। তবু স্তন্যপায়ী জীব
জননীকে দেখেছিল অনুরূপ সন্তানের মতো।
যে যার নিজের কাজে- যেখানেই- যে-কোনও নিয়মে
সুন্দর সফল হয়ে সময়ের বাহবা পেয়েছে,
সেখানে- একটু পরে- ঘ্রাণ পেয়ে সোমনাথ সেন
নেমে এসে মোটরে হুটার দিয়ে অনুভব ক’রে যায় ব্যাপ্ত সোমনাথ
অনুভূত হয়ে আছে- (নিজের চোখের ‘পরে নির্জন, নীলাভ
ঠুলি এঁটে- সকলের মতামত অনুভব ক’রে।)
তাই তার প্রাসাদের দেয়ালের ‘পরে
পৃথিবীর কৃতকর্মাদের ছবি টাঙানো রয়েছে
তবুও পৃথিবী আজ আপনার নিরালোক বিলোড়িত মন
তেমন জানে না ব’লে সোমনাথ তার
অনেকাংশে গোলাকার ছবিগুলো পোষ মাসে চতুষ্কোণ ক’রে
উত্তরভাদ্রপদে পুনরায় কেড়ে নিল- ত্রিকোণ আকার ক’রে নিল
ভবেনের বাড়ি থেকে ফিরে তবু বিকেলের চায়ের টেবিলে
সহসা চায়ের থেকে উঠে গিয়ে হৃদয় ও অ্যালবাম থেকে
সকলের ছবিগুলো বরখাস্ত ক’রে ফেলে।
লোমের কুশনে শুয়ে (সোমনাথ) ভাবে:
শিকার টাকার, সবই ট্যাক্সিডার্মি, নড়ে তবু মানুষের মুখচ্ছবি ছাড়া;
দেয়ালে জন্তুর শিং সারস্বত সমাজ সাজায়েছে-
সমাজের সমুজ্জ্বল সদাগর অধ্যক্ষের ভিড়ে
কোথাও বঙ্কিম শিং ছাড়া কিছু সরলতা নেই তবু- কেবল সে একা
তাহার হৃদয়ে মনে চেতনার পরিষ্কার নির্দেশ হারায়ে
অধ্যাপক, চোর, ভাঁড়, গণিকার হাতে ব্যবহৃত
পালিশ পয়সাটাকে রেখে দিল- দেয়ালের সুদীর্ঘ আরশিতে
নিজের টাকের দিকে বিক্ষোভে তাকায়ে সোমনাথ
ভেবে গেল- শিং দু’টো নেড়ে গেল- তার পর শুক্ল পরচুলা
সকলে এঁটেছে ব’লে গভীর হুল্লোড় ক’রে সে-ও নিল এঁটে।