সময়শীর্ষে

কুজ্ঝটিকায় আকাশ মলিন হয়ে থাকে কী যে!
সরিয়ে দিয়ে বিশাল আলোয় দিক্-নিরুপক সূর্য আসে নিজে,
কি আসে যায় যদি সাগর থাকে অপার শিশিরকণায় ভিজে
সূর্য এখন উত্তরণের মালিক হ’ল নিজে।
যা হয়ছে: হয়েছে- সেই পৃথিবীকে অন্ধকারে পিছন দিকে ফেলে
মানব-বিমূঢ়তাকে লাল দেশলাইয়েতে জ্বেলে
এসেছে সে আরেক ভোরের পটভূমির দিকে।
সারাটা দিন মাছরাঙা আর জলের ঝিলিকে
সূর্য আছে টের পেয়েছি;- সংকল্প সুর তাই
গভীর হ’ল;
নীলকণ্ঠ পাখির গুঞ্জরণে সর্বদাই
মহাদেবের কণ্ঠজ্বালা ফুরিয়ে গেছে তবে
ভেবেছিলাম।
কত অশোকস্তম্ভ বুদ্ধ আনল আলো;- কত না ইউরোপের বিপ্লবে
মানব-আশা ক্ষণিক জেগে বিনিপাতের শ্লেষে
ফুরিয়ে গেল, তবুও সূর্যকরোজ্জ্বলতাকে ভালোবেসে
পৃথিবী তার নতুন ক্ষয় ব্যথা ভুল ভাণে
পিছন থেকে সারাটা দিন ডোডো-পাখির টানে
শূন্য হয়ে যেতে-যেতে তবুও সকল সাধারণের তরে
আবার নতুন আশাজনক সমাজ আকাশ গড়ে;
জেনেছিলাম।
তোমাকে আমি দেখেছিলাম বেবিলনের ছাদে
আমার পানে তাকিয়ে আছো।
অনেক দিনের মানব-ইতিহাসের পটভূমি
শেষ ক’রে এক নিকটতর সূর্যালোকে ভোরের আলোয় তুমি
এখুনি ছিলে;
নিমেষে তবু নীল আকাশে পালকে পাখি আলোক ঠিকরিয়ে
কখন হঠাৎ চ’লে গেছে সূর্য সঙ্গে নিয়ে
জানি না কোন্ নিকেতনের দিকে;
অন্ধকারে ফেলে গেছে মানব-পৃথিবীকে।
ইতিহাসের নবীনতর এ আঁধারে অকূল মরুভূমি
তেমনই আজও ছড়িয়ে আছে- শববহন তেমনই আপার, তুমি
তেমনই অসীম শবের প্রাবরণী খুলে ধীরে,
অন্তবিহীন মৃত্যুকে আজ বারে বারে ঢাকছ শিশিরে,
করুণাময় শান্ত মৃত্তিকায়।
মৃত্যু ছাড়া কী আর আসে যায়,
কী আর আছে অপরিসীম শববহন ছাড়া
অন্ধকারে অনন্তকাল অনুগমন ক’রে গেছে যারা
শোক-কাতর মৃতের জগৎ- জীবন পাবে ব’লে
আলম্বিত রাতের আকাশ- আলোর অন্বেষণে,
আমরা সে সব প্রবহমান ইতিহাসের মনে
প্রথম সূত্রপাতে জ’ন্মে তবুও চিরদিন
দেখেছি প্রেমিক গণিকাদের নিকট থেকে ঋণ
খাচ্ছে শুধু; অনেক মহৎ মর্ম রীতি প্রতিশ্রুতি ক্ষয়
হ’তে দেখে বুঝেছি তবু সত্য আছে অন্য অর্থময়;
আশার- ভালোবাসার- সেবার- জানার;
এ বেদ ছেড়ে ভালো জীবনবেদে- অন্য আলোর স্পন্দনে
চ’লে যাবার অপার সেতু আছে মানবমনে।