স্বপ্নের হাতে

পৃথিবীর বাধা- এই দেহের ব্যাঘাতে
হৃদয়ে বেদনা জমে- স্বপনের হাতে
আমি তাই
আমারে তুলিয়া দিতে চাই!
যেই সব ছায়া এসে পড়ে
দিনের- রাতের ঢেউয়ে- তাহাদের তরে
জেগে আছে আমার জীবন;
সব ছেড়ে আমাদের মন
ধরা দিত যদি এই স্বপনের হাতে!
পৃথিবীর রাত আর দিনের আঘাতে
বেদনা পেত না তবে কেউ আর-
থাকিত না হৃদয়ের জরা-
সবাই স্বপ্নের হাতে দিত যদি ধরা!…

আকাশ ছায়ার ঢেউয়ে ঢেকে
সারা দিন- সারা রাত্রি অপেক্ষায় থেকে,
পৃথিবীর যত ব্যথা- বিরোধ, বাস্তব
হৃদয় ভুলিয়া যায় সব!
চাহিয়াছে অন্তর যে ভাষা,
যেই ইচ্ছা, যেই ভালোবাসা,
খুঁজিয়াছে পৃথিবীর পারে-পারে গিয়া-
স্বপ্নে তাহা সত্য হয়ে উঠেছে ফলিয়া!
মরমের যত তৃষ্ণা আছে-
তারই খোঁজে ছায়া আর স্বপনের কাছে
তোমরা চলিয়া আস-
তোমরা চলিয়া আস সব!
ভুলে যাও পৃথিবীর ঐ ব্যথা- ব্যাঘাত- বাস্তব!…

সকল সময়
স্বপ্ন- শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
যাদের অন্তরে-
পরস্পরে যারা হাত ধ’রে
নিরালা ঢেউয়ের পাশে-পাশে-
গোধূলির অস্পষ্ট আকাশে
যাহাদের আকাঙ্ক্ষার জন্ম- মৃত্যু- সব-
পৃথিবীর দিন আর রাত্রির রব
শোনে না তাহারা!
সন্ধ্যার নদীর জল, পাথরে জলের ধারা
আয়নার মতো
জাগিয়া উঠিছে ইতস্তত
তাহাদের তরে।
তাদের অন্তরে
স্বপ্ন, শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
সকল সময়!…

পৃথিবীর দেয়ালের ‘পরে
আঁকাবাঁকা অসংখ্য অক্ষরে
এক বার লিখিয়াছি অন্তরের কথা-
সে সব ব্যর্থতা
আলো আর অন্ধকারে গিয়াছে মুছিয়া!
দিনের উজ্জ্বল পথ ছেড়ে দিয়ে
ধূসর স্বপ্নের দেশে গিয়া
হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষার নদী
ঢেউ তুলে তৃপ্তি পায়- ঢেউ তুলে তৃপ্তি পায় যদি-
তবে ঐ পৃথিবীর দেয়ালের ‘পরে
লিখিতে যেও না তুমি অস্পষ্ট অক্ষরে
অন্তরের কথা!-
আলো আর অন্ধকারে মুছে যায় সে-সব ব্যর্থতা!…

পৃথিবীর ওই অধীরতা
থেমে যায়, আমাদের হৃদয়ের ব্যথা
দূরের ধুলোর পথ ছেড়ে
স্বপ্নেরে- ধ্যানেরে
কাছে ডেকে লয়!
উজ্জ্বল আলোর দিন নিভে যায়,
মানুষেরও আয়ু শেষ হয়!
পৃথিবীর পুরানো সে-পথ
মুছে ফেলে রেখা তার-
কিন্তু এই স্বপ্নের জগৎ
চির দিন রয়!
সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব,-
নক্ষত্রেরও আয়ু শেষ হয়!