তোমাকে দেখি না আর

তোমাকে দেখি না আর এ-জীবনে- কিন্তু জানি মরণের পর
জারুলগাছের নিচে জ্যোৎস্নায় আমরা ঘুমোব পরস্পর
আমের পল্লবের কাছে চড়াই মনিয়া ঘুঘু বেঁধে নেবে নীড়
শিয়রে জাগবে চাঁদ চির-কাল আমাদের শুক্লা-দশমীর
বনের ডোরালো বাঘ বাসক-ঝোপের থেকে দিয়ে যাবে দেখা
এক বার- দুই বার… শুকনো পাতার পথে চাঁদনিতে চ’লে যাবে একা
বাঘিনির গন্ধমাখা কান্তারের দিকে দূর নদীটির পারে
সুন্দরীর এলোমেলো ডালপালা নরম নির্জন অন্ধকারে
চিতলহরিণী এক চেয়ে র’বে বাঁকা চাঁদে নীল শিং তুলে
ধবল নরম স্তন চুমো খাবে কানসোনা ঘাসে- কাশফুলে
গায়ের উজ্জ্বল ছাল যেন কোন্ রূপসির শালের মতন
কুহকে অবশ ক’রে রেখে যাবে তারাবনে হরিণের মন
তোতার রুপালি ঘাড় এইখানে লেগে আছে তোতাটির বুকে
মক্ষিরানি চুমো খায় সোনার মতন রেণুমাখা নীল মুখে
মাছিদের; জারুলের পাতা ঝরে যেন সাদা খইয়ের মতন
কত যে মানিকজোড় জ্যোৎস্নায় করছে গুঞ্জরন
চালতাপাতার ‘পরে গোক্ষুরা খেলায় কালনাগিনির সাথে
পাতালপুরীর রূপ উপচায় গাঢ় কৃষ্ণা-নবমীর রাতে
চাঁদের নরম জালে এইখানে- জারুলের পাতাগুলো ঝরে
সোনার রুপার মতো আমাদের দু’জনের মিলিত শিয়রে
তোমার মুখের ‘পরে ঝরে ফুল- সাদা-সাদা বাতাবির ফুল
বাতাসে পড়ছে ঝ’রে হিজল-মুকুল
কৃষ্ণা-নবমীর চাঁদ জেগে থাকে আমাদের ঘুমন্ত শিয়রে
ঘুম আরও গাঢ় হয়,- ঘুমোবার রাত ধানসিড়িটির ঝরনার স্বরে
ঘুম আর ভাঙে না ক’,- কোনও দিন ভাঙবে না আর
শাখার পিছন থেকে বাঁকা চাঁদ উঁকি দিয়ে দেখে বার-বার
বার-বার জ্যোৎস্নার কমনীয় ঢেউ ঝরে আমাদের মুখে
আমরা ঘুমোই ধানসিড়ির চুমোয়, রূঢ় সূর্যের চাবুকে।