বিরহিণী রাধা


কেন লো তমালে সই কোকিলা কুজিছে অই
পঞ্চমে তুলিয়া কুহু তান!
কেন লো কুসুম রাজি, ফুটিয়া উঠিল আজি
মোহিয়া সৌরভে জগ-প্রাণ!


কেন গো গগনে শশী, হাসিছে অমিয় হাসি
ছড়াইয়া কিরণ মাধুরী!
পত্রে ফুলে ফলে, সে কিরণ ঝল মলে,
প্রকৃতির প্রেম খেলা মরি!


প্রকৃতির ম্লান মুখে, শীতার্ত্ত ধরণী-বুকে
কেনলো উল্লাস এত ভরা!
আইল কি ঋতুরাজ, ধরিয়া নবীন সাজ
ফুল-সাজে সাজাইতে ধরা!


ভূতলে, ভূধর জলে, সুনির্ম্মল নভস্থলে
কত শোভা চেয়ে দেখ, সই!
দহিতে এ পোড়া হৃদি, মধু মাস এল যদি,
মাধব রহিল আজি কই!


অই সখি!-
পাপিয়ার পিউ গান, শুনিয়া শিহরে প্রাণ
আকুল হৃদয় সেই তানে!
ক’ সখি, সে স্মৃতিগুলি, কেমনে মুছিয়া ফেলি
কি দিয়া ধৈরজ ধরি প্রাণে!


সায়াহ্নে, নিশীথ কালে, অইনা কদম্ব মূলে
দাঁড়াইয়া শ্যাম গুণমণি,
হৃদয় আকুল ক’রে রাধা বলে উচ্চৈস্বরে
করিতরে কত বংশী ধ্বনি!


হায় সেই সুধাস্বরে, পাগলিনী প্রায় সখি
ছুটিয়া যেতেম শ্যাম কাছে!
কদম্বের ডালে বসি, কুজিত কোকিল পাখী
আর কি সে দিন সখি আছে!


কোথা আজি সেই সব? সুদুর স্বপন প্রায়
থেকে থেকে ধূধূ মনে পরে!
অইত যমুনা বহে, অইতে পাপিয়া গায়
কেন তবে প্রাণ হু হু করে!


বসন্ত শরত কত, এল গেল ক্রমাগত,
শ্যাম ত না ফিরে এল সই!
আসিবে আসিবে বলি, ফুটেছিল আশা-কলি
সে আশা শুকা’য়ে গেল অই!

১০
সদা তারে অভিমানে, বিষময় বাক্য-বাণে
করেছি কতই জ্বালাতন!
সে যে সখি হেসে হেসে, বাঁধি মোরে ভূজপাশে
প্রতিশোধ দিয়াছে চুম্বন!

১১
এখন নুতন প্রেমে, মজিয়াছে গুণমণি,
রাধা বলে ভাবেনাকো আর!
রাধা কিন্তু তারি তরে, সতত কাঁদিয়া মরে
শ্যাম বিনে কে আছে আমার?