গানের আড়াল

তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কণ্ঠের গান-
এইটুকু শুধু রবে পরিচয়? আর সব অবসান?
অন্তর-তলে অন্তরতর যে ব্যথা লুকায়ে রয়,
গানের আড়ালে পাও নাই তার কোনদিন পরিচয়?

হয়তো কেবলি গাহিয়াছি গান, হয়ত কহিনি কথা,
গানের বাণী সে শুধু কি বিলাস, মিছে তার আকুলতা?
হৃদয়ে কখন জাগিল জোয়ার, তাহারি প্রতিধ্বনি
কন্ঠের তটে উঠেছে আমার অহরহ রণরণি,-
উপকূলে বসে শুনেছ সে সুর, বোঝ নাই তার মানে?
বেঁধেনি হৃদয়ে সে সুর, দুলেছে দু’ল হয়ে শুধু কানে?

হায় ভেবে নাহি পাই-
যে চাঁদ জাগালো সাগরে জোয়ার, সেই চাঁদই শোনে নাই
সাগরের সেই ফুলে ফুলে কাদা কূলে কূলে নিশিদিন?
সুরের আড়ালে মূর্চ্ছনা কাঁদে, শোনে নাই তাহা বীণ?
আমার গানের মালার সুবাস ছুঁল না হৃদয়ে আসি’?
আমার বুকের বাণী হল শুধু তব কন্ঠের ফাঁসি?

বন্ধু গো যেয়ো ভুলে-
প্রভাত যে হবে বাসি, সন্ধায় রেখো না সে ফুল তুলে!
উপবনে তব ফোটে যে গোলাপ- প্রভাতেই তুমি জাগি’
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ-সুষমা লাগি’।
যে কাঁটা-লতায় ফুটেছে সে-ফুল রক্তে ফাটিয়া পড়ি’
সারা জনমের ক্রন্দন যার ফুটিয়াছে শাখা ভরি’-
দেখ নাই তারে! -মিলন মালার ফুল চাহিয়াছ তুমি,
তুমি খেলিয়াছ বাজাইয়া মোর বেদনার ঝুম্‌ঝুমি!

ভোলো মোর গান, কি হবে লইয়া এইটুকু পরিচয়,
আমি শুধু তব কন্ঠের হার, হৃদয়ে কেহ নয়!
জানায়ো আমারে, যদি আসে দিন, এইটুকু শুধু যাচি-
কণ্ঠ পারায়ে হয়েছি তোমার হৃদয়ের কাছাকাছি!


১৩৩৫ পৌষের ‘ধূপছায়া’য় প্রকাশিত হয়।