হার-মানা-হার

তোরা কোথা হতে কেমনে এসে
মণি-মালার মতো আমার কণ্ঠে জড়ালি!
আমার পথিক-জীবন এমন করে
ঘরের মায়ায় মুগ্ধ করে বাঁধন পরালি।।

আমায় বাঁধতে যারা এসেছিল গরব করে হেসে
তারা হার মেনে হায় বিদায় নিল কেঁদে,
তোরা কেমন করে ছোট্ট বুকের একটু ভালোবেসে
ঐ কচি বাহুর রেশমি ডোরে ফেললি আমায় বেঁধে!
তোরা চলতে গেলে পায়ে জড়াস,
‘না’ ‘না’ বলে ঘাড়টি নড়াস,
কেন ঘর-ছাড়াকে এমন করে
ঘরের ক্ষুধা স্নেহের সুধা মনে পড়ালি।।

ওরে চোখে তোদের জল আসে না-
চমকে ওঠে আকাশ তোদের
চোখের মুখের চপল হাসিতে।
ঐ হাসিই তো মোর ফাঁসি হল,
ওকে ছিঁড়তে গেলে বুকে লাগে,
কাতর কাঁদন্‌ ছাপা যে ও হাসির রাশিতে!

আমি চাইলে বিদায় বলিস, ‘উঁহু,
ছাড়ব নাকো মোরা’
ঐ একটু মুখের ছোট্ট মানাই এড়িয়ে যেতে নারি।
কত দেশ-বিদেশের কান্না-হাসির
বাঁধন-ছেঁড়ার দাগ যে বুকে পোরা;
তোরা বসলি রে সেই বুক জুড়ে আজ,
চিরজয়ীর রথটি নিলি কাড়ি।
ওরে দরদিরা! তোদের দরদ
শীতের বুকে আনলে শরৎ,
তোরা ঈষৎ-ছোঁয়ায় পাথরকে আজ
কাতর করে অশ্রুভরা ব্যথায় ভরালি।।

[দৌলতপুর, কুমিল্লা
বৈশাখ ১৩২৮]