খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসেযায়

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে[১]আসেযায়[২]
ধরতে পারলে মনোবেড়ি
দিতাম পাখির পায়।।

আট কুঠুরী নয় দরজা আঁটা
মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাটা
তাঁর উপরে সদর কোঠা
আয়না মহল তায়।।

কপালের ফের নইলে কি আর
পাখিটির এমন ব্যবহার
খাঁচা ছেড়ে পাখি আমার
কোনখানে পালায়।।

মন তুই রইলি খাঁচার আশে
খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে
কোনদিন খাঁচা পড়ব ধসে
লালন ফকির কয়।।

(সাধকদেশ)

ফুটনোট

১. কমনে = কমনে/কোমনি কুষ্টিয়ার একটা আঞ্চলিক ভাষা। এর অর্থ – কোন দিক দিয়ে। বা কোন পথ দিয়ে অথবা কোন স্থান দিয়ে। এক শব্দে কীরূপে।

অনেকেই এই পদে ‘কমনে’ (উচ্চারণ হবে ‘কম্‌নে’) শব্দটিকে ‘কেমনে/ক্যামনে’ বলে ভুল করে থাকেন। বিখ্যাত অনেক শিল্পী ও কিছু কথিত লালন শিল্পী এমনকি অনেক গবেষকেরাও ‘কেমনে/ক্যামনে’-ই গেয়ে থাকেন ও উচ্চারণ করে থাকেন এবং লিখে থাকেন। একাডেমিক বইয়েও লিখে রেখেছে কেমনে!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘গোরা’ উপন্যাসের শুরুতেই (প্রথম পৃষ্ঠায়) এক বাউলের কণ্ঠে উক্ত গানটি গাওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি ‘কম‍্নে’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

লালনগীতির প্রখ্যাত শিল্পী ফরিদা পারভীন উক্ত গানটি গাওয়ার সময় ‘কমনে’ গেয়ে থাকেন।

বিখ্যাত ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত লালনের জীবনীনির্ভর ‘মনের মানুষ’ উপন্যাসেও তাই লেখা। আবার একই উপন্যাস অবলম্বনে গৌতম ঘোষের নির্মিত চলচ্চিত্রেও গানটি ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানেও ‘কমনে’ শব্দটিই গাওয়া হয়।

আমাদের দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল তার নির্মিত ‘লালন’ চলচ্চিত্রের গানে ‘কমনে’ ব্যবহার করেছেন। অসংখ্য বাউলরা তাদের গানে এই শব্দটি ‘কম‍্নে’ উচ্চারণ করে গেয়েছে।

‘বাংলা একাডেমি ব্যাবহারিক বাংলা অভিধান’ অনুসারে ‘কমনে’ অর্থ কেমনে, কীরূপে, কী প্রকারে। অর্থাৎ কোন পথ দিয়ে আসে যায়।

খাঁচায় অর্থাৎ দেহে এই অচিন পাখি আসছে আবার যাচ্ছে নিঃশ্বাসের সাথে সাথে। কীভাবে এ আসা যাওয়া হচ্ছে তার কাছে এ এক রহস্য। যদি তিনি ধরতে পারতেন, মনবেড়ি দিতেন পাখির পায়ে, যেন আর যেতে না পারে। লালন এখানে রহস্যের ভেদ জানার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। এই গান বা পদ।

২. আসেযায় = এটি আসে যায় হবে না, ‘আসেযায়’ হবে। আবদেল মাননান সম্পাদিত ‘লালনসমগ্র’ গ্রন্থটিতেও উল্লিখিত গানে ‘আসেযায়’ একসাথে লিখেছেন।