গীতি ভাষণ (মৃত্যুদন্ড)

আমি কিছু বাঙালির মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলতে চাই
আবার ভাবি মৃত্যুদন্ড বড্ড হালকা শাস্তি হয়ে যায়,
না না না রাজাও না জানা মতে কোনো নীতিও নাই
তাই রাজনীতির জমজমাট ব্যবসা চলে নির্দ্বিধায়,
না না না আপত্তি নাই উপরে বসে ঈশ্বর আল্লাহ
দেখছে তামাশা নিচে তোরাই মোদের
হর্তা-কর্তা আর ভাগ্য বিধাতা।

রক্তপিপাসু দানবের দল
রক্ত ফিনকি আর মায়ের অশ্রুজল,
আদিকাল হতে বাংলায় বসতি
ইতিহাসে ঘুর ঘুর ঘুর ঘুর ঘুর ঘুর ঘুর ঘুর
ঘুর করে ঘুরে এসেছে শুধু একই পুনরাবৃত্তি।

আর তাই,
আমি কিছু বাঙালির মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলতে চাই।

শেখাবে তোকে অনেক কিছু
পায়ের রগ কাটা, হুমকি দেয়া, বোমা ছোড়া
আর ভচাৎ করে পেটের ভুড়ি সব নামিয়ে ফেলতে,
সব কিছু দেবার আশ্বাস দেবে
দেবে না শুধু শিক্ষা, চাকরী আর শান্তিতে বসবাস করতে।

ক্ষমতা নামের শিল্প-কারখানায়
তৈরী হচ্ছে এক বিশাল ইন্দ্রজাল,
আর তুই তাতে শিক্ষিত মূর্খ
বিনে পয়সায় কেনা টাটকা কাঁচামাল।

আর জানতে পারবো তোর মৃত্যুর খবর পত্রিকায় পরদিন,
হরতাল, ছুট্টি, লাগাও ফুর্তি কেবল টিভিতে শ্রীদেবী নাচবে
ধিনাক না তিন তিন, ধিনাক না তিন তিন, ধিনাক না তিন তিন।

তোর নেতা-নেত্রী এসে চুক চুক চুক করে
চুম্বন দেবে তোর এতিম সন্তানকে,
মোদের “বীর শহীদ একনিষ্ঠ কর্মী” বলে
দশটি হাজার টাকা সঁপে দেবে তোর ষোঁড়শী বিধবাকে।

পঁচবি তুই কোন কবরস্থানে নতুবা গলবি চিতার আগুনে,
আর বছর ঘুরতে না ঘুরতে তুই হারিয়ে যাবি
ইতিহাসের কোনো ডাস্টবিনে।

খুব ভাগ্যবান হলে অবশ্য
একটি স্মৃতিসৌধ হতে পারে তোর নামে.
সেথায় কুকুর পা তুলে পেচ্ছাবের পিচকারী ছুঁড়বে
পথ হারানোর ভয়ে,
আর তোর নেতা-নেত্রী বাহ্‌ বাহ্‌ বাহ্‌
আর সালাম কুঁড়াবেন তোর কঙ্কালের উপরে দাঁড়িয়ে।

ইতিহাসের একটা সময় ছিল যখন বাঙালি ছিল জাতি
আজ ‘বাঙালি’ নেহায়েতই এক রাজনৈতিক উপাধি,
আর বাঙালির আনন্দ উৎসবের মাস ফেব্রুয়ারি।

ঘৃণ্য রাজাকারের পোস্টার স্টিকার আর ধিক্কার
সবই শোভা পায় এই ‘একুশের আনন্দ মেলায়’
পাশাপাশি ইমরান খান আর ‘পিয়ারা পাকিস্তানের’
ক্রিকেটারের পোস্টারও ঝোলে দোকানে দোকানে।

‘প্রগতিশীল বাঙালি’ দু’রাত ঘুমাতে পারেনি
পাকিস্তানের ক্রিকেটারের ব্যর্থতা চিন্তা করতে করতে,
অথচ খবর রাখেনা তার দু’লক্ষ মা-বোন
আজও আটক আছে পাকিস্তানেরই কত পতিতালয়ে।

সেথায় একাত্তরের ঘাতকের সন্তানাদি
আজও নির্মম ধর্ষণ চালায় পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসাবে,
আর তুই শালা আঙুল চোষা বাংলাদেশি
দে হাত তালি ‘বাউন্ডারি বাউন্ডারি’ আর ‘ছক্কা ছক্কা’ বলে।

কোথায় তোমরা নারীবাদী পক্ষ কোথায় তুমি তসলিমা?
কোথায় আমার দুই দেশনেত্রী খালেদা আর হাসিনা?
আপনারা কি খোঁজ নেবেন এসব গুরুতর অভিযোগের?
নাকি শুধু রাজনীতি করবেন নিজেদের আত্মপ্রচার আর আত্মপ্রসাদের।
নাকি আখ্যা দেবেন কেবল আমায় উন্মাদ, অবাঞ্ছিত নতুবা রাষ্ট্রদ্রোহী বলে।
শুধু বলি আমার দু’লক্ষ মা-বোনের মুক্তির দাবিতে আমি প্রস্তুত,
আমি প্রস্তুত, আমি প্রস্তুত, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে।

আর যদি নীরব থাকেন, জেনে নেবো
এই মৌনতা আপনাদের সম্মতিরই লক্ষণ
আর বলবো, শুধু উপহাস করেই বলবো-
আমি আমার নিজের মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলতে চাই
আবার ভাবি নিজের বেলায়ও এ বড্ড হালকা শাস্তি হয়ে যায়।

কন্ঠ ও সুর: মাকসুদুল হক
সঙ্গীত: গৌতম ঘোষ