ভাড়া বাড়ির গল্প


মৃত্যু আর জীবনের মাঝের দেয়াল
ছুঁয়ে ছুঁয়ে একটু এগুলেই
আজিমপুরের পুরোনো কবর,
কিনু গোয়ালার গলি-গ্রীণ লেন।

ঘরের পাশেই তিনতলা ফ্ল্যাট।
রোদ্দুরে শুকোতে দেয়া সে-বাড়ির
শাড়ি ও ব্লাউজ কালেভদ্রে খ’সে পড়লে
যে-ঘরের ছাদ ধন্য হয়
গত পাঁচ বছর ধরেই আমি
সেই ঘরের ভাড়াটে।

‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে
বিশ টাকা ভাড়ায় ঢুকেছিলুম,
স্বাধীনতার বদৌলতে সেই ভাড়া বৃদ্ধির
উত্তপ্ত পারদ এসে ঠেকেছে পঞ্চাশে।

অথচ বাড়ির পাশের নোংরা ডোবা
কিম্বা পেছনের সংলগ্ন কবর -এ দু’য়ের
কোনোটাই উঠে যায় নি।
পাকিস্তানীরা চলে গেলে
ইরানী গোরস্থানের এক ইটের
দেয়াল ভেঙেছে বটে,
আমার তথৈ বচঃ।

না আসছে আলো, না আসছে হাওয়া।
শুধু, টিনের চাল থেকে চুঁয়েপড়া
বৃষ্টির জল অবিরল ধারায় নেমেছে,
কোনদিন আমাকে ফাঁকি দেয় নি, এই যা।

আরশোলা, মাছিমশা কিম্বা প্রকৃতির
নতুন পতঙ্গের আনাগোনা
ইতিমধ্যে চর্তুগুণ বৃদ্ধি পেলেও
পাশের ফ্ল্যাটের শাড়িগুলো আপাততঃ
অনর্থক খ’সে পড়া স্থগিত রেখেছে।
যেন আমি আজকাল এইসব পছন্দ করি না।

যেন আমি শাড়ি নয়, নারী নয়,
মশা তাড়াতেই বেশি ভালবাসি।
যেন মশা তাড়ানাের জন্যেই আমার জন্ম।
আমার বড় হওয়া।


অতঃপর পাশের ফ্ল্যাটের সেই মেয়েটির
ধুমধাম করে সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে গেলে
লালপাড় শাড়ির বিপ্লব একদিন
চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো।

তখন মৃত্যু আর জীবনের মাঝের দেয়াল
কেঁপে উঠলো,
খসে পড়লো ইটের গাঁথুনি,
এক
দুই
তিন ক’রে
ঘরের ভিতরে উঠে এলো সংলগ্ন কবর। হাড়গোড়।

ঘরময় তখন শুধু পাগলা শেয়ালের ছুটোছুটি,
মানুষের পচা মাংসের হুলুস্থুল
লাল কাফনের শাঁড়ি দিয়ে বাঁধা মৃত্যু আর
মত্যু
শুধু মৃত্যু
শুধু বাসা বদলের পালা, শধু পাগলা শেয়ালের ছুটোছুটি।


আমি এখন একটি নতুন একতলা ঘর খুঁজছি
কিনু গোয়ালার গলির ভিতরে হোক
ক্ষতি নেই। আমি চাই,
শধু পাশে একটি তিনতলা ফ্ল্যাট থাকবে।
আমার ঘরের মধ্যে আলো না আসুক
হাওয়া না আসুক ক্ষতি নেই,
রৌদ্রে শুকোতে দেয়া পাশের ফ্ল্যাটের
শাড়িগুলো কালে ভদ্রে
আমার ঘরের চালে খসে পড়ে
আমাকে জানিয়ে দেবে
নারী আছে, আজও আছে।

আমি সেই স্বপ্নের শাড়ি মুগ্ধ হাতে তুলে এনে
লাল বকুলের মালা গাঁথবো, আর
আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চিৎকার করে ডাকবো
রীণা, উল্টোপাল্টা বাতাসে
তোমার শাড়ি উড়ে গিয়েছিল
আমি পেয়ে-ছি।