কথোপকথন ১

শুভঙ্কর-
কলকাতার টেলিফোন আজ নয় বহুদিন প্রতিজ্ঞা করেছে
শোকশব্দ ছাড়া কিছু শুনতে দেবে না।

টেলিফোনে হঠাৎ আমাকে?
কি করে নাম্বার পেলে?
কে জানাল এই সময়েই
নিজের গহ্বরে একা থাকি?

কোথা থেকে ফোন করছো?
গ্রীস? না প্যারিস?
যতটুকু জানি তাতে সাত বছর কলকাতায় ছিলে না।
আবার ফিরেছ বুঝি?
কবে?

একটু জোরে কথা বলো প্লীজ।
টেলিফোন আজকাল মানুষের আন্তরিক কথোপকথনে
বিঘ্ন বা বেড়াই নয়,
গা ছিঁড়ে যাওয়ার কাঁটাতার।

টেলিফোনে অকস্মাৎ শুভঙ্কর শুনে চমকে উঠি।
শুভঙ্কর? সে তো মিথ্যে,
আপাদমস্তক কাল্পনিক।
এই সৌরকরোজ্জ্বল পৃথিবীর দৈনন্দিনে অস্তিত্ববিহীন।
সে তো মাত্র একজনের নিভৃত-রচিত
নিজস্ব উদ্ভিদ।

তাহলে কি তুমি?
সত্যি তুমি?

ঐ সম্ভাষণ আমি, সত্যি বলছি, কল্পনা করিনি।
হঠাৎ বসন্ত-বাঁশি জৈষ্ঠ্যের রোদ্দুরে
এ প্রত্যাশা স্বপ্নেরও অধিক।

নন্দিনী-
টেলিফোন নাম্বারের খোঁজ পাওয়া?
বাঃ বাঃ, ইতিহাস!
ঐ গাবদা ডাইরেকটরি দশবার উল্টেছি পাল্টেছি
কোথাও তোমার নাম নেই।
কি করে পেলাম শুনবে?
হঠাৎ নন্দনে কাল শ্যামলকান্তির সঙ্গে দেখা
চ্যাপলিন উৎসবে।
তারই কাছ থেকে এই মহার্ঘ নাম্বারটুকু পাওয়া

কলকাতায় কবে ফেরা?
সে তো প্রায় তিনমাস হল।

ভেনিসের গন্ডোলায়, প্যারিসের পঁপিদু সেন্টারে,
লন্ডনের বারবিকানে শোঁপা বা মোৎসার্ট রজনীতে,
সুইজারল্যান্ডের লেকে স্পীড বোটে নির্জলা-সাঁতারে,
ভার্টিকানে, সিসটাইন চ্যাপেলের স্বর্গ চোখে মেখে,
ইউরোপের দিনগুলোয় এমনি আরো নানা জায়গায়
তোমাকে পড়েছে মনে,
পড়ে নিভে গেছে, কিংবা
নিভিয়ে দিয়েছি।
কিন্তু যেই কলকাতায়
পুনর্জন্ম মৃত আগুনের।
রমণী-সুলভ সব ন্যায়-নীতি ভেঙে ছত্রখান।

কলকাতার আকাশের মেঘমেদুরতা
কলকাতার ফুটপাতের হাঁটুজল, ডুবো রিকশা, চোখে পড়তেই
আমার ভিতরে বৃষ্টি
মেঘ, ঝড়, বিদ্যুতের ভীষণ কত্থক।

তোমারই পাঞ্জাবি পরে কলকাতার গাছ,
কলকাতার মেট্রো রেলে তোমারই আবেগ-অস্থিরতা,
রাতের নিয়নে জ্বলে তোমারই চোখের দপদপ।
সমস্ত কলকাতা জুড়ে আছো যেন,
তুমিই কলকাতা।

কবে দেখা হবে বলো,
কখন? কোথায়?
সিগারেট ছেড়ে দিয়ে পাইপ ধরেছো
সে সংবাদ পেয়ে গেছি কান ফেস্টিভ্যালে,
একদা তোমার ভক্ত সাংবাদিক সুব্রত-র থেকে।
পাইপ ছাড়াও আরও উপহার গোছানো রয়েছে।
পিকাশো, মাতিস, মদিগিলিয়ানি, ব্রাক, পল ক্লে-র
দারুণ দুর্দান্ত প্রিন্ট।
অ্যাসট্রে, ফ্লোরেন্সে কেন মাইকেলেঞ্জেলো প্রিন্ট করা।

এ ছাড়া আর কি পাবে
অনুমানসাপেক্ষ নিশ্চয়ই।
কবে? কাল? সন্ধেবেলা?
কোথায়? কি বলবে? হ্যালো,
হ্যালো, হ্যালো, জোরে বলো,
কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছি না যে, হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো।
মাই গড!