হলাহল

এমন ক’দিন কাটে আর।
দিনরাত-দিনরাত- অবিরাম- অনিবার।
ললিত গলিত হাস, জাগরণ, দীর্ঘশ্বাস,
সোহাগ, কটাক্ষ, মান, নয়ন-সলিল-ধার,
মৃদু হাসি, মৃদু কথা, আদরের, উপেক্ষার,
এই শুধু-এই শুধু- দিনরাত এই শুধু
এমন ক’দিন কাটে আর!

কটাক্ষে মরিয়া যায়, কটাক্ষে বাঁচিয়া উঠে,
হাসিতে হৃদয় জুড়ে, হাসিতে হৃদয় টুটে,
ভীরুর মতন আসে দাঁড়ায়ে রহে গো পাশে,
ভয়ে ভয়ে মৃদু হাসে, ভয়ে ভয়ে মুখ ফুটে,
একটু আদর পেলে অমনি চরণে লুটে,
অমনি হাসিটি জাগে মলিন অধর পুটে,
একটু কটাক্ষ হেরি অমনি সরিয়া যায়,
অমনি কাঁদিয়া সারা, মরমে মরিয়া যায়।
অমনি জগত যেন শূন্য মরুভূমি হেন,
অমনি মরণ যেন প্রাণের অধিক ভায়!
চাহে না শুনিতে কথা তবুও প্রাণের ব্যথা
কেঁদে কেঁদে সেধে সেধে তাহারে শুনাতে চায়,
ভুলেও স্বপনে তারে দেখিতে চাহে না হা-রে
তবু সাথে সাথে রহে চরণ ধুলার প্রায়।
দলিতেও যে হৃদয় মনে নাহি পড়ে তার
লয়ে সেই তুচ্ছ মন কেঁদে কেঁদে অনুক্ষণ
ভয়ে ভয়ে পদতলে দিতে যায় উপহার!
দেখুক্ বা না দেখুক্- জানুক্ বা না জানুক্
ভাবুক্ বা না ভাবুক্- সেই পদতল সার।
জানে সে পাষাণময় কিছুতে কিছু না হয়,
সুমুখে দাঁড়ায়ে তারি তবু সাধ কাঁদিবার।
যেন সে কম্পিত-কায় ভিক্ষা মাগিবারে চায়
তুমিও কাঁদ’ গো প্রভু হেরি এই অশ্রুধার।
এই শুধু- এই শুধু- দিবারাত এই শুধু-
এমন ক’দিন কাটে আর।

প্রণয় অমৃত এ কি? এ যে ঘোর হলাহল-
হৃদয়ের শিরে শিরে প্রবেশিয়া ধীরে ধীরে
অবশ করেছে দেহ শোণিত করেছে জল!
বালিকা-হৃদয় সম ক’রেছে পুরুষ-মন,
পরের মুখেতে চেয়ে কাঁদে শুধু অনুক্ষণ!
কাজ নাই, কর্ম্ম নাই, ব’সে আছে এক ঠাই
হাসি ও কটাক্ষ ল’য়ে খেলেনা গড়িছে যত,
কভু ঢুলে-পড়া আঁখি -কভু অশ্রু-ভারে নত।
দূর কর-দূর কর-বিকৃত এ ভালবাসা-
জীবনদায়িনী নহে, এ যে গো হৃদয়-নাশা!
কোথায় প্রণয়ে মন যৌবনে ভরিয়া উঠে,
জগতের অধরেতে হাসির জোছনা ফুটে,
চোখেতে সকলি ঠেকে বসন্ত-হিল্লোলময়-
হৃদয়ের শিরে শিরে শোণিত সতেজে বয়-
তা নয়, একি এ হল, একি এ জর্জ্জর মন,
হাসিহীন দু অধর, জ্যোতিহীন দু নয়ন!
দূরে যাও-দূরে যাও- হৃদয় রে দূরে যাও-
ভূলে যাও- ভূলে যাও- ছেলে খেলা ভূলে যাও-
দূর কর’-দূর কর’ বিকৃত এ ভালবাসা
জীবনদায়িনী নহে, এযে গো হৃদয় নাশা!