নিরাবৃত

যবনিকা-অন্তরালে মর্ত্য পৃথিবীতে
ঢাকাপড়া এই মন।
আভাসে ইঙ্গিতে
প্রমাণে ও অনুমানে আলোতে আঁধারে
ভাঙা খণ্ড জুড়ে সে যে দেখেছে আমারে
মিলায়ে তাহার সাথে নিজ অভিরুচি
আশা তৃষা।
বার বার ফেলেছিল মুছি
রেখা তার;
মাঝে-মাঝে করিয়া সংস্কার
দেখেছে নূতন করে মোরে।
কতবার
ঘটেছে সংশয়।
এই-যে সত্যে ও ভুলে
রচিত আমার মূর্তি,
সংসারের কূলে
এ নিয়ে সে এতদিন কাটায়েছে বেলা।
এরে ভালোবেসেছিল,
এরে নিয়ে খেলা
সাঙ্গ করে চলে গেছে।

বসে একা ঘরে
মনে-মনে ভাবিতেছি আজ,-
লোকান্তরে
যদি তার দিব্য আঁখি মায়ামুক্ত হয়
অকস্মাৎ,
পাবে যার নব পরিচয়
সে কি আমি।
স্পষ্ট তারে জানুক যতই
তবু যে অস্পষ্ট ছিল তাহারি মতোই
এরে কি আপনি রচি বাসিবে সে ভালো।
হায় রে মানুষ এ যে।
পরিপূর্ণ আলো
সে তো প্রলয়ের তরে,
সৃষ্টির চাতুরী
ছায়াতে আলোতে নিত্য করে লুকোচুরি।
সে মায়াতে বেঁধেছিনু মর্ত্যে মোরা দোঁহে
আমাদের খেলাঘর,
অপূর্ণের মোহে
মুগ্ধ ছিনু,
মর্ত্যপাত্রে পেয়েছি অমৃত।
পূর্ণতা নির্মম সে যে স্তব্ধ অনাবৃত।

১৭ আষাঢ়, ১৩৩৯