পথের শেষ

পথের নেশা আমায় লেগেছিল,
পথ আমারে দিয়েছিল ডাক।
সূর্য তখন পূর্বগগনমূলে,
নৌকা তখন বাঁধা নদীর কূলে,
শিশির তখন শুকায় নিকো ফুলে,
শিবালয়ে উঠল বেজে শাঁখ।
পথের নেশা তখন লেগেছিল,
পথ আমারে দিয়েছিল ডাক।

আঁকাবাঁকা রাঙা মাটির লেখা
ঘরছাড়া ওই নানা দেশের পথ-
প্রভাত-কালে অপার-পানে চেয়ে
কী মোহগান উঠতেছিল গেয়ে,
উদার সুরে ফেলতেছিল ছেয়ে
বহুদূরের অরণ্য পর্বত।
নানা দিনের নানা-পথিক-চলা
ঘরছাড়া ওই নানা দেশের পথ।

ভাবি নাইকো কেন কিসের লাগি
ছুটে চলে এলেম পথের ‘পরে।
নিত্য কেবল এগিয়ে চলার সুখ,
বাহির হওয়ার অনন্ত কৌতুক,
প্রতি পদেই অন্তর উৎসুক
অজানা কোন্‌ নিরুদ্দেশের তরে।
ভোরের বেলা দুয়ার খুলে দিয়ে
বাহির হয়ে এলেম পথের ‘পরে।

বেলা এখন অনেক হয়ে গেছে,
পেরিয়ে চলে এলেম বহু দূর।
ভেবেছিলেম পথের বাঁকে বাঁকে
নব নব ভাগ্য আমায় ডাকে,
হঠাৎ যেন দেখতে পাব কাকে,
শুনতে যেন পাব নূতন সুর।
তার পরে তো অনেক বেলা হল,
পেরিয়ে চলে এলেম বহু দূর।

অনেক দেখে ক্লান্ত এখন প্রাণ,
ছেড়েছি সব অকস্মাতের আশা।
এখন কেবল একটি পেলেই বাঁচি,
এসেছি তাই ঘাটের কাছাকাছি,
এখন শুধু আকুল মনে যাচি
তোমার পারে খেয়ার তরী ভাসা।
জেনেছি আজ চলেছি কার লাগ,
ছেড়েছি সব অকস্মাতের আশা।

বোলপুর
১৪ চৈত্র [১৩১২]