তারা

আকাশ-ভরা তারার মাঝে আমার তারা কই?
ওই হবে কি ওই?
রাঙা আভার আভাস মাঝে, সন্ধ্যা-রবির রাগে
সিন্ধু-পারের ঢেউয়ের ছিটে ওই যাহারে লাগে,
ওই যে লাজুক আলোখানি, ওই যে গো নাম-হারা,
ওই কি আমার হবে আপন তারা?

জোয়ার ভাঁটার স্রোতের টানে আমার বেলা কাটে
কেবল ঘাটে ঘাটে।
এম্নি ক’রে পথে পথে অনেক হ’লো খোঁজা,
এম্নি ক’রে হাটে হাটে জম্লো অনেক বোঝা;-
ইমনে আজ বাঁশি বাজে, মন যে কেমন করে
আকাশে মোর আপন তারার তরে।

দূরে এসে তা’র ভাষা কি ভুলেছি কোন্-খনে?
প’ড়্বে না কি মনে?
ঘরে-ফেরার প্রদীপ আমার রাখ্লো কোথায় জ্বেলে
পথে-চাওয়া করুণ চোখের কিরণখানি মেলে?
কোন্ রাতে যে মেটাবে মোর তপ্ত দিনের তৃষা,
খুঁজে খুঁজে পাবো না তা’র দিশা?

ক্ষণে ক্ষণে কাজের মাঝে দেয়নি কি দ্বার নাড়া-
পাইনি কি তা’র সাড়া?
বাতায়নের মুক্ত-পথে স্বচ্ছ শরৎ রাতে
তা’র আলোটি মেশেনি কি মোর স্বপনের সাথে?
হঠাৎ তা’রি সুরখানি কি ফাগুন হাওয়া বেয়ে
আসেনি মোর গানের পরে ধেয়ে?

কানে-কানে কথাটি তা’র অনেক সুখে দুখে
বেজেছে মোর বুকে।
মাঝে মাঝে তা’রি বাতাস আমার পালে এসে
নিয়ে গেছে হঠাৎ আমায় আন্-মনাদের দেশে,
পথ-হারানো বনের ছায়ায় কোন্ মায়াতে ভুলে
গেঁথেছি হার নাম-না-জানা ফুলে।

আমার তারার মন্ত্র নিয়ে এলেম ধরাতলে
লক্ষ্য-হারার দলে।
বাসায় এলো পথের হাওয়া, কাজের মাঝে খেলা,
ভাস্লো ভিড়ের মুখর স্রোতে এক্লা প্রাণের ভেলা,
বিচ্ছেদেরি লাগ্লো বাদল মিলন-ঘন রাতে
বাঁধন-হারা শ্রাবণ-ধারা পাতে।

ফিরে যাবার সময় হ’লো তাইতো চেয়ে রই,
আমার তারা কই?
গভীর রাতে প্রদীপগুলি নিবেছে এই পারে
বাসা-হারা গন্ধ বেড়ায় বনের অন্ধকারে;
সুর ঘুমালো নীরব নীড়ে, গান হ’লো মোর সারা,
কোন্ আকাশে আমার আপন তারা?

আণ্ডেস্ জাহাজ,
১ নভেম্বর, ১৯২৪।