ভাঙা মন্দির

(১)

পুণ্য-লোভীর নাই হ’লো ভীড়
শূন্য তোমার অঙ্গনে,
জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।

অর্ঘ্যের আলো নাই বা সাজালো
পুষ্পে প্রদীপে চন্দনে,
যাত্রীরা তব বিস্মৃত-পরিচয়।

সম্মুখ পানে দেখো দেখি চেয়ে,
ফাল্গুনে তব প্রাঙ্গণ ছেয়ে
বন-ফুলদল ঐ এলো ধেয়ে
উল্লাসে চারিধারে।

দক্ষিণ বায়ে কোন্ আহ্বান
শূন্যে জাগায় বন্দনা গান,
কি খেয়া-তরীর পায় সন্ধান
আসে পৃথ্বীর পারে?

গন্ধের থালি বর্ণের ডালি
আনে নির্জ্জন অঙ্গনে,
জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়,
বকুল শিমুল আকন্দ ফুল
কাঞ্চন জবা রঙ্গনে
পূজা-তরঙ্গ দুলে অম্বর-ময়।

(২)

প্রতিমা না হয় হ’য়েছে চূর্ণ,
বেদীতে না হয় শূন্যতা,
জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়,
না হয় ধূলায় হ’লো লুন্ঠিত
আছিলো যে চূড়া উন্নতা,
সজ্জা না থাকে কিসের লজ্জা ভয়?
বাহিরে তোমার ঐ দেখো ছবি,
ভগ্ন – ভিত্তি – লগ্ন মাধবী,
নীলাম্বরের প্রাঙ্গণে রবি
হেরিয়া হাসিছে স্নেহে।

বাতাসে পুলকি’ আলোকে আকুলি’
আন্দোলি’ উঠে মঞ্জরী গুলি,
নবীন প্রাণের হিল্লোল তুলি’
প্রাচীন তোমার গেহে।

সুন্দর এসে ঐ হেসে হেসে
ভরি’ দিলো তব শূন্যতা,
জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।

ভিত্তি রন্ধ্রে বাজে আনন্দে
ঢাকি’ দিয়া তব ক্ষুণ্ণতা
রূপের শঙ্খে অসংখ্য জয় জয়।

(৩)

সেবার প্রহরে নাই আসিল রে
যত সন্ন্যাসী সজ্জনে,
জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়,

নাই মুখরিল পার্ব্বণ-ক্ষণ
ঘন জনতার গর্জ্জনে,
অতিথি-ভোগের না রহিল সঞ্চয়।

পূজার মঞ্চে বিহঙ্গ-দল
কুলায় বাঁধিয়া করে কোলাহল,
তাই তো হেথায় জীব-বৎসল
আসিছেন ফিরে ফিরে।

নিত্য সেবার পেয়ে আয়োজন
তৃপ্ত পরাণে করিছে কূজন,
উৎসব-রসে সেই তো পূজন
জীবন – উৎস তীরে।

নাইকো দেবতা ভেবে সেই কথা
গেলো সন্ন্যাসী সজ্জনে,
জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।

সেই অবকাশে দেবতা যে আসে,-
প্রসাদ – অমৃত – মজ্জনে
স্খলিত ভিত্তি হ’লো যে পুণ্যময়।

(* মাঘ, ১৩৩০)