গ্রহণ

মরা গঙ্গায় স্নানের আগে
একবার ভাবি,
মসৃণ মানুষ নয়,
তার চেয়ে ভালাে ক্ষীণজীবী পাখি,
কিম্বা ক্ষিপ্রগতি ঘােড়া
নিজের ছায়াভীরু,
ছায়া ঘন হলে বাইরে বেরােই;
অদৃষ্ট বিরূপ হলে নিষ্ফল পুরুষকার,
মহাশূন্যে কণামাত্র স্ফুলিঙ্গ নেই,
বিচ্ছিন্ন ভারী মেঘ মুখােমুখি, মনে হয়,
আসন্ন প্রলয়।
তবু সাহসে বুক বেঁধে, প্রায়-খালি বাসে চেপে
ময়দানে উধাও।

দীর্ঘ দিন গ্রীষ্মের পিচে ফেঁপে
সন্ধ্যায় শূন্যগর্ভ, স্বস্তিহীন।
কীসের আগ্রহে আদিম আকাশ
নিঃশব্দে নেমে আসে,
শ্বাসরােধ করে আমার নাগরীর।
অন্তরে অন্য এক পুরুষ বিচ্ছুরিত চাপা হাসি হাসে,
সন্ধ্যার জলে সােনা জ্বলে।

নিঃসঙ্গ, শেষ মিনারে
সূর্যপূজারীর শবের উপরে যেমন,
শূন্য থেকে আজ
একচক্ষু, ছিন্নপাখা জিজ্ঞাসার পাখি
নামে, শুধু নামে।

পলায়ন ছাড়া বেরােরার পথ জানা নেই,
চক্রব্যুহ ঢােকা কেন প্রয়োজন।
অলস চোখে তার শান্ত সমৰ্পণ,
কঠিন বুক দুরু দুরু কাঁপে,
অনাগত কার পদধ্বনি!
চাবিতে বন্ধ দুয়ার, অন্ধ ঘরে একলা থাকি,
রক্তের জোয়ার হৃদয় কাঁপায়,
মুহূর্তের সমর্পণের দারুণ সাহস ছাড়া
ভীরু মজ্জায় আর কিছু নেই।
কোনােদিন নরম কোলে
নতুন শিশুর কান্নায় সন্দেহ থামবে,
একচক্ষু পাখি ফিরে যাবে নীড়ে?
সূর্যে আজ কবন্ধের ছায়া, দিন শেষ,
চরাচর কী ভীষণ করুণ লাগে;
অভিশাপে শতছিদ্র মনের উপর
বাঁধন টুটে বুঝি নামে রক্তের প্লাবন।

মরা সমুদ্রে মরণ আসে না,
নােনা জলে শরীর ভাসে।