নববর্ষের প্রস্তাব

সােমেন চন্দের স্মৃতিতে


শীতকাল; দূরে বিস্মরণী বরফে পাহাড় ঢাকা,
গুমােট কুয়াশা শহরে। জমকাল আসর থেকে ফিরি;
এদিকে-ওদিকে চকের প্রান্তে দেখি
খড়কুটোয় ছােট ছােট আগুন জ্বালে ভিখিরিরা,
সেঁকে দিনশেষের চাপাটি; কোথায় কুটির,
উপরে মহাশূন্য, মারণমন্ত্র পড়ে উত্তুরে হাওয়া।

তারপরে কী দারুণ গ্রীষ্ম
রাশি রাশি গােলাপ ফোটে আর ঝরে,
শৌখিন দৃশ্য।
সুখ বাড়ন্ত, এদিকে দিন বেড়ে চলে
দুরারােগ্য ক্ষতের যন্ত্রণায়,
উৎসব তাে অতিক্রান্ত,
স্মরণের মাছি ঘােরে
পথপ্রান্তে নিঃস্ব কত জরদ্গব্‌‌ ভিখিরিকে ঘিরে।


সমাজে মধ্যপদ ধীরে ধীরে লােপ পায়,
বণিকেরা প্রাকার বানায়,
দিনে দিনে চক্রবৃদ্ধি হারে
নিরন্ন বেকারের মজুরের ভিখিরির সংখ্যা বাড়ে,
সারি সারি রক্তমুখ সৈন্য চলে যমের দক্ষিণ দুয়ারে,
দিন হতে দিনে, মৃত্যু হতে আর এক মৃত্যুতে এ কী যাত্রা,
প্রবল মড়কে, শেষহীন নরকে তার শেষ মাত্রা।

অনেক দিন পরে গুমােট আকাশ আজ কথা কয়:
পিতৃপুরুষের স্বার্থবােধ পেয়েছিলে সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার;
আজ আদিম জোয়ারে ভেসে যাবে সংসার
কোন মাচায় বাসা তখন বাঁধবে আবার?
দিগ্বিজয়ী অন্ধকারে শুভবুদ্ধির আলাে,
কে জ্বালাবে বল?


সত্তার কৌলিণ্য খােয়াব না কোনােদিন
এ-গর্বে জিইয়ে থাকে বুদ্ধিজীবীরা।
বিশ্বকে বিচলিত করার সাহস রাখে না,

চিন্তিত দর্শক, হয়ত বােঝে
দুনিয়াদারির দুর্দিন, বাজার অন্ধকার,
পথে জমকাল স্তব্ধতা;
বেগতিক দেখে মহাত্মাদের প্রস্থান,
নিশাচরের নাচ নির্জন হাটে।


ঘরে ফিরি, আলাে জ্বেলে কুলুঙ্গিতে রাখি,
এ-অন্ধকারে আরাে অনেক অন্ধকার জমে।
চলিত সভ্যতার মােড়ে বিপরীত মতামতে ধাঁধা লাগে,
কোন ঘাটে তরী ভিড়াই?
নীলচে চোখ, তুঙ্গ বুক, উরুর নিরুদ্দেশ অন্ধকার,
দেহস্বার্থের স্বর্গে আস্থা হারাই,
ও নিরুদ্বেগ উদ্দাম বিলাস
নতুন মানুষের জন্মে
আবার জন্মমৃত্যুপ্রেমের কারাগার রচে,
বিয়ে বিষ অক্ষয় হয়।
স্বার্থপর ও অর্থহীন শরীরের কারবার
যদি না গড়ি নতুন বিশ্ব-সংসার।

অনেক ঘাটের জল খেয়ে বুঝি
অনেক লােক যেখানে
সেখানে সত্তার নতুন সূর্য ওঠে,
কালের ঘােলাটে জলে জোয়ার লাগায়
সম্ভব হয় অনেকের খেয়া পারাপার,
গভীর জলে একের শবদেহ ভােবে।