বাঁশী

আমি জানি না বাঁশীতে কি যে আছে, সখা
পথের পথিক বঁধু!
কোন্‌ গোপন মনের দুখ-সুখ-মাখা
হৃদি সঞ্চিত মধু!
সে যে অধর-পরশে চকিতে জাগিয়া
ফুকারি উঠিছে ডাকি;
ওগো বাঁশীর মাঝারে ধ’রে কি রেখেছে
ভুবন-ভুলানো পাখী?
সে যে সোহাগ-পাগল দুলালের মত
অভিমানে ফুলে’ ফুলে’
হায় আমারি পরাণ-পিঞ্জর ‘পরে
বার বার পড়ে ঢুলে।
তার তানে যে এখনো উঠিছে উলষি’
কাননের কলহাসি,
তার সুরে মুহুমুহু মহুয়া ফুলের
নেশা উঠিতেছে ভাসি’,
ওগো লুকায়ে তাহারে রেখো না নিভৃতে,
আমরা নেব না ধরি’;
তারে মুক্ত সমীরে ছেড়ে দাও ফিরে
নহিলে যাবে সে মরি’।
সে যে চঞ্চু হানিয়া পরাণ-পুষ্পে
লাজে স’রে গেল ধীরে,
সে যে না জেনে দু’আঁখি করেছে সজল,
আহা সে আসুক ফিরে।
ওগো শুধু একবার জাগাও তোমার
বাঁশী-বাসী পাখীটিরে,
ওগো স্বর্গসুখের সুষমা আবার
লাগুক হৃদয়-তীরে।
ফিরে নয়নে লাগুক স্বপনের নেশা
তপ্ত ললাটে হাওয়া,
আমি না পেয়ে পাব গো পরাণে পরাণে
চেয়ে যা’ যায় না পাওয়া।
মোর মনের কামনা প্রাণের বাসনা
মূরতি ধরিছে আজি,
মোর যত ভোলা গান পেয়ে নব প্রাণ
আকাশে উঠিছে বাজি’!
বঁধু একি করিলে গো বাঁশীরে জাগায়ে
পথের পথিক, সখা!
মোর পিঞ্জরাহত পরাণ-পাখীর
চঞ্চল হ’ল পাখা।
হায় সুদূর অতীতে এমনি একদা
বাঁশরী বাজায়ে পথে,
মোরে উন্মাদ ক’রে কে যেন গিয়েছে;
সে অবধি কোনো মতে
আমি পারি না বাঁধিতে হৃদয় আমার
মন ছুটে বাতায়নে,
শুনি উঠিতে বসিতে বাঁশী চারি ভিতে
ঘুম নাহি দু’ নয়নে।
সে যে কাননে বাজিছে মর্ম্মর রবে
কল্লোল নদীজলে,
সে যে গগনের তলে গানে কোলাহলে
ধ্বনিছে শতেক ছলে;-
তাই উন্মনা আমি তৃষিত নয়নে
দুয়ারে ছুটিয়া আসি;-
ওগো গগনে, পবনে, পরাণে আমার
নিয়ত বাজিছে বাঁশী!
ওগো পথের পথিক! ওগো সখা মোর!
কি বাঁশী আনিলে, বঁধু।
মোর নয়নে ভরিয়া উঠিল সলিলে,
একি বিষ! একি মধু!