নীলকণ্ঠ পাখী

ছাড়িব বলিয়া ধরি তোরে পিঞ্জরে!
মুক্তি দিতেই বেয়াধের মত বাঁধি!
অল্প মেয়াদে- দু’চারি দিনের তরে-
বনের পাখীরে কাঁদায়ে আপনি কঁদি!

আগে পিছে তোর অবাধ অব্যাহত
মুক্তির হাওয়া বহিছে রাত্রি দিন,
মুক্তি-সায়রে গান ওঠে অবিরত
মুক্তির লোকে বাজে আলোকের বীণ!

তার মাঝে তুই করিস বিহার, পাখী!
বারো মাস, হায়, তারি মাঝে তোর বাস;
আমি তোরে শুধু দু’দিনের তরে রাখি
বন্দী করিয়া রাখি রে আপন পাশ।

আমার সমুখে অগাধ অনিশ্চয়
পিছনে কেবল বন্ধন-স্মৃতি জাগে;
বন্দী হৃদয় সাধ করে সঞ্চয়,-
মুক্তেরে বাঁধি’ মুক্তি সে দিতে মাগে।

ছাড়া নাহি পাই- ছেড়ে দিয়ে তাই দেখি,
ছেড়ে দিতে বাঁধি- অজানার স্বাদ পেতে,
কল্পনা ফিরে আসে রে আকাশে ঠেকি’
কল্পলতার সন্ধানে যেতে যেতে।

সাগর সেচিতে গরল পেয়েছে যারা-
সে গরল ভখি’ কণ্ঠ হয়েছে নীল,-
নীলার কণ্ঠী কণ্ঠে পরেছে তারা,
নীলকণ্ঠের সাথে তাই এত মিল।

মিতা তুই মোর রে নীলকণ্ঠ পাখী।
তোরে দেখে আমি আশ্বাস পাই প্রাণে,
পরেছে যে জন বিষাদের কালো রাখী
তোর মুক্তিতে নিজে সে মুক্তি মানে।

বিজয়োৎসবে উৎসাহে মাতে প্রাণ
পুলকে উদাস আঁখি ভরে কূলে কূলে,
উৎসারি উঠে বিজয়ার জয় গান
খাঁচার দুয়ার ধীরে যবে দিই খুলে।

উধাও! উধাও! উড়ে তুই যাস্ ভেসে,-
বুলায়ে দোলায়ে নীল ডানা নীলাকাশে,
নীল পতঙ্গ! নীলাজ মাঝে শেষে
মিলাইয়া যাস্! সন্ধ্যা ঘনায়ে আসে।

ধীরে ধীরে জলে ডুবে যায় দর্পণ;
আমি বসে বসে আকাশ-পাতাল ভাবি!
বন্দী পাখীরে মোচন করিয়া মন
মনে মনে, হায়, করে মুক্তির দাবী!

বেয়াধের মত বেঁধে মোরা রাখি তোরে
খেয়ালের ঝেকে সুখহীন পিঞ্জরে,
তবু দিয়ে যাস অমৃতে তিতায়ে, ওরে!
মুক্তির হাওয়া বুলাস্ প্রাণের পরে!