একুশের স্বীকারোক্তি

যখন শত্রুকে গাল-মন্দ পাড়ি,
কিম্বা অযথা চেঁচাই,
আহ্লাদে লাফিয়ে উঠে
বিছানায় গড়াই; মধ্য-রাতে তেরাস্তায় দাঁড়িয়ে
সম্মিলিত কণ্ঠে চীৎকারে দিনে দিনে জমে ওঠা উষ্মাকে
অশুভ পেঁচক ভেকে উদ্বিগ্ন গৃহস্থের মতো
সখেদে তাড়াই আর সাঁতার কাটতে গিয়ে
সখের প্রতিযোগিতায় নেমে মাঝ-নদীতে হঠাৎ
শবে-বরাতের শস্তা হাউই-এর মতো দম খরচ হ’য়ে গেলে
উপকূলবাসীদের সাহায্যের আশায়
যখনই প্রাণপণে ডাকি,
অথবা বক্তৃতামঞ্চে (কদাচ সুযোগ পেলে) অমৃত ভাষণে
জনতাকে সংযত রেখে অনভ্যস্ত জিহ্বা আমার
নিষ্ঠীবনের ফোয়ারা ছোটায়
অথবা কখনো-সখনো রঙ্গমঞ্চের বাতি নিভে গেলে
আঁধারের আড়াল থেকে যেসব অশ্লীল শব্দ ছুঁড়ে মারি,
এবং উজ্জলমুখো বন্ধুদের ম্লান করে দেয়ার মতো কোনো
নিদারুণ দুঃসংবাদ জানিয়ে
সশব্দে গান ধরি,
মিছিল প্রত্যাগত কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে শাসাই,
ঊর্ধ্বশ্বাস ট্যাক্সির মুখে ছিটকে-পড়া
দিকভ্রান্ত গ্রাম্যজনের চকিত, উদ্বেল মুখ দেখে
টিটকারিতে ফেটে পড়ি

অর্থাৎ যখনই চীৎকার করি
দেখি, আমারই কণ্ঠ থেকে
অনবরত
ঝ’রে পড়ছে অ, আ, ক, খ
যদিও আজীবন আমি অচেনা ঝোড়ো সমুদ্রে
নীল পোষাক পরা নাবিক হ’তে চেয়ে
আপাদমস্তক মুড়ে শার্ট-পাৎলুনে
দিনের পর দিন
ঘুরেছি পরিচিত শহরের আশপাশে,
স্বদেশের বিহ্বল জনস্রোতে

অথচ নিশ্চিত জানি
আমার আবাল্য-চেনা ভূগোলের পরপারে
অন্য সব সমৃদ্ধতর শহর রয়েছে,
রয়েছে অজানা লাবণ্যভরা তৃণের বিস্তার
উপত্যকার উজ্জ্বল আভাস,
বিদেশের ফুটপাথে বর্ণোজ্জ্বল দোকানের বৈভব,
মধ্যরাত পেরুনো আলো-জ্বলা কাফের জটলা,
সান্টাক্লজের মতো এভিনিউর দু’ধারে
তুষারমোড়া শাদা-বৃক্ষের সারি
নিত্য নতুন ছাঁদের জামা-জুতো,
রেস্তোরাঁর কাঁচের ওপারে ব’সে থাকা বেদনার স্ফূরিত অধর
আর মানুষের বাসনার মতো ঊর্ধ্বগামী
স্কাইস্ক্রেপারের কাতার-
কিন্তু তবু
চুরুট ধরিয়ে মুখে
তিন বোতামের চেক-কাটা ব্রাউনরঙা সুট প’রে,
বাতাসে উড়িয়ে টাই
ব্রিফকেস হাতে ‘গুডবাই’ বলে দাঁড়াবো না
টিকিট কেনার কাউন্টারে কোনোদিন –
ভুলেও যাবো না আমি এয়ারপোর্টের দিকে
দৌডুতে-দৌড়ুতে, জানি, ধরবো না।
মেঘ-ছোঁয়া ভিন্নদেশগামী কোনো প্লেন।