বড় দীর্ঘ এ অসামাজিকতা

সেদিন সকালে তোমার তেতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে
আমি ভীষণ মর্মাহত হয়েছিলাম।
ভাবতেই পারিনি
তোমার কাছ থেকে অসৌজন্যের অমন
বেধড়ক ধাক্কা পাবো।
এই প্রথমবারের মতো, বুঝলে আফজাল, তুমি আমাকে
কোনো সাদর-সম্ভাষণ করোনি,
নিজ্ঞেস করোনি আমার কুশল সংবাদ।

সত্যি বলতে কী, তোমার সেই নিদারুণ অসৌজন্যে
আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি,
তোমার মধ্যে যে এমন সীমাহীন উদাসীনতা
বাসা বেঁধেছিল, জানা ছিল না আমার।

সেদিন সকালে তোমার ফ্ল্যাটের
দোরগোড়ায় পৌঁছে কলিং বেল বাজাতে হয়নি।
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়েই
আমার মনে হয়েছিল, তোমার দরজা আজ খোলা থাকবে।

কলিংবেলের প্রসঙ্গ এখন
না ওঠালেও পারতাম। কিন্তু কী জানো আফজাল,
কখনো কখনো খুব তুচ্ছ ব্যাপারও
মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। যাকগে, চৌকাঠে পা রেখেই
দেখলাম, তুমি ঘুমাচ্ছ অঘোরে। এদিকে
আমি যে সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি তোমার শয্যার পাশে,
বেলা যে খুব তেজী হয়ে উঠেছে,
বিন্দুমাত্র হুঁশ নেই তোমার। সেই মুহূর্তে মনে হলো,
এখন রোদ যদি আরো বেশি তেতে ওঠে,
যদি টাইফুন বয়ে যায় তোমার ঘরের ভেতরে,

তবু তুমি এক চুলও নড়বে না
বিছানা থেকে, এতটুকু কাঁপবে না তোমার চোখের পাতা।
আফজাল, কী করে ভুলবো যে,
আমি এলে খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠতে তুমি,
হাত বাড়িয়ে দিতে হ্যান্ডশেকের উদ্দেশ্যে আর
খুব পীড়াপীড়ি করতে খেয়ে যাওয়ার জন্যে।
অথচ সেদিন কোনো অভিবাদন জানানো তো দুরের কথা,
তুমি একবার তাকালেও না আমার দিকে।

তোমার ঘুম ভাঙানোর জন্যে
ঘন ঘন কান্নার রোল উঠেছিল তোমার ফ্ল্যাটে।
এর আগে তোমার পুত্র-কন্যা
এমন করে কেঁদে বুক ভাসায়নি কখনো।
তোমার স্ত্রীর অমন ডুকরে-ওঠা দেখে কংক্রিটের দেয়াল পর্যন্ত
গলে পানি হয়ে গিয়েছিল,
কিন্তু তোমার ঘুমে এতটুকু চিড় ধরেনি।
অথচ আগে সামান্য শব্দ হলে কিংবা তোমার গৃহিণী
আলতো ক’রে ধাক্কা দিলে গাঢ়তম ঘুম থেকেও তুমি
ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়তে।

আফজাল, এ বড় দীর্ঘ অসামাজিকতা তোমার।
কতকাল তুমি আসো না আমার বাসায়, স্মিত হেসে
বসো না বারান্দায়, বানাও না ধোঁয়ার রিং।
শুধু কখনো কখনো দেখি তুমি ছায়ার মতো
ঘুমিয়ে আছো মেঘের ভেলায়,
এয়ারপোর্ট রোডের কিনারে,
কচুরিপানার বেগুনী ফুলে, ক্রমাগত জাগতে-থাকা
আমার কবিতার খাতায়।