চাঁদমারি

আমার মিত্রের সংখ্যা কমছে ক্রমশ,
অথচ কী দ্রুত যাচ্ছে বেড়ে বিচিত্র শক্রুর ব্যুহ
আজকাল। কেউ দীর্ঘকায়, কেউ বেঁটে;
কেউ বোকা, কেউবা চতুর
অতিশয়; কেউ কেউ শিশেনাদরপরায়ণ খুব,
বেহেড মাতাল,
ধর্মের ইজারাদার কেউ,
কারো ধর্মে নেই মতি। বাস্তবের বরপুত্র কেউ,
বাগ্মিতায় দড়;
কেউবা নীলিমাজোড়া পরাবাস্তবের মৃণভোজী
পক্ষীরাজে উদাস সওয়ার,
গুলরুখপ্রিয় অতি, মসলিন-মিহি।
কেউ ছৈল ছবিলা রাজনীতিতে মশগুল, কেউ
বিবর্ণ বসন্তমুগ্ধ স্বঘোষিত অরাজনৈতিক।

এমন বেয়াড়া দিনকাল,
গাছপালাগুলো নিজ নিজ জায়গা ছেড়ে
বীর ম্যাকবেথের শক্রুর মতো ঘোর রণসাজে
ভীষণ আসছে ধেয়ে আমার উদ্দেশে। নদীনালা
ফুঁসে ওঠে যখন তখন,
শহরের যাবতীয় পোস্টার আমাকে
আপাদমস্তক মুড়ে ফেলে
নিমেষে বানাতে চায় মমি;
মিউজিয়ামের
প্রতিটি জন্তুর মূর্তি জেগে ওঠে আজ,
আইজেনস্টাইনের ফিম্লে পাথরের পশুরাজ
সহসা যেমন।

যতদূর জানে লোকে ক’বছর আগেও এখানে
চোতে কি বোশেখে,
অঘ্রাণে, ফাল্গুনে
আমাদের প্রিয়তম রঙবেরঙের পাখি ছিল
অগণিত, আজ এ তল্লাটে
একটি পাখিও আর পড়ে না সহজে চোখে কারো।
একদা এখানে বনে অনেক হরিণ ছিল, বনের কিনারে এসে ওরা
পানিতে ডোবাতো মুখ, দিতো লাগ দুলিয়ে শিং-এর
মোহন স্থাপত্য পূর্ণিমায়,
এখন হরিণরিক্ত অরণ্যানী ব্যাধের ব্যাপক স্বেচ্ছাচারে।
পাখি আর হরিণের সংখ্যা কমে গেছে অতি দ্রুত,
উত্তরে দক্ষিণে
বেড়েছে ব্যাধের সংখ্যা ক্রমাগত ঋতুতে ঋতুতে।

সেই কবে থেকে
বারুদের গন্ধে দিশেহারা
খরগোশ এবং জলপিপি কোথায় যে
দিয়েছে গা ঢাকা।
এমন কি কাঠবিড়ালিরা কোনোক্রমে
বেরোয়না গাছের কোটর থেকে আর,
মরে যায় খাদ্যাভাবে; হয়তো হতে চায়
মাটির নিচের কীট অথবা পতঙ্গ নিরিবিলি।

এখন আমার দিকে ভোজালি উদ্যত,
এখন আমার
মাথার ওপর ঝোলে শত শত রগচটা খাঁড়া
এখন আমাকে হল্ট ব’লে
ভীষণ ধমকে দেয় গর্জনপ্রবণ
বনেদী রিভলবার,
এখন আমার বুক লক্ষ্য করে শ্বাপদের মতো
নিবিষ্ট তাকিয়ে আছে বন্দুকের চোখ,
এখন আমার ঘরে বাড়িয়ে দিয়েছে খুব চকচকে গ্রীবা
সমর্থ কামান।
আর কতকাল আমি
সপ্তরথী শক্রুতার ছারখার চাঁদমারি হবে?