চুল

বইমেলায় ঘুরছিলাম তরুণ
কবির সঙ্গে। ধুলো
লাগছিল জুতো-মোড়া পায়ে
এবং গায়ে
গা ঠেকে যাচ্ছিল দারুণ
ভিড়ে। বড় একা আমি;
কে যেন, মনে পড়ছে না,
বলল, ‘আপনাকে চিনতে
ভারি কষ্ট হচ্ছে। চুল ছাঁটালেন
কবে?’
কোনো উত্তর না দিয়ে ঈষৎ
হাসি, অজান্তে নিজের
হাত চলে যায় মাথায়। খুব
ছোট হয়ে গেছে আমার
স্যামসনী চুল কাচির দাপটে।

সেলুন থেকে ফেরার পর
আমার নিজের কাছেই
নিজেকে কেমন উটকো
লাগছে।
আমি যেন আমি নই আর,
অন্য কোনো মানুষ
প্রবেশ করেছে আমার ভেতর।

এখন আমি গাছের সঙ্গে,
নদীর সঙ্গে, ঝোপঝাড়ের
জোনাকি, বাঁশ বাগান এবং
নক্ষত্রের সঙ্গে
কথা বলতে ভুলে গেছি।
কীভাবে
দেবদূতের সঙ্গে আলাপ করতে
হয়, তা-ও যেন
মনে নেই আমার। যখন
আমার চুল অনেক
দীর্ঘ ছিল, ঘাড়ে ছিল
ক্রীড়াপরায়ণ
উত্তর মেরুর শাদা চালুকের
শাবকের ধরনে,
তখন কবিতার নানা শব্দ
আসতো অবলীলায়
আমার কাছে, যেমন জলের
উপরিতলে আসে মাছ। এখন
আমি আগেকার
ব্যক্তিত্ব-রহিত,
কবিতা-বঞ্চিত।

মাথা ভরা খাটো চুল নিয়ে
বিব্রত আমি
অধুনা শয্যায় ছটফট
করতে-করতে ক্লান্ত। হঠাৎ
কে এক আদিম পুরুষ আমার
চুল ধ’রে
টানতে থাকে রাতভর। আমি
তার উৎপীড়নের কাছে
নতজানু; ছায়াপথ,
সপ্তর্ষিমন্ডল, দিগন্তজোড়া
স্তব্ধতা আমাকে এক নতুন
খেলার আমন্ত্রণ জানায়।

১.৩.৯৪