মোমবাতি

সকাল না কি সন্ধ্যা, দুপুর না রাতদুপুর,
বলতে পারব না। কখনো কখনো এ রকম হয়, সময়ের
বাইরে আমাদের অবস্থান। মন
আমাদের পার্থিবতার অন্তরালে নিয়ে যায়।
কখনো স্বপ্ন আমরা রচনা করি, কখনো-বা
স্বপ্ন আমাদের নির্মাণ করে-স্বপ্নময়তায় বাস্তবতাকে
অগ্রাহ্য করে পরিযায়ী পাখি আমরা
কাল থেকে কালান্তরে। তখন
ভীষণ তোলপাড় আমার ভেতর, হৃদয়
ঝড়-লাঞ্ছিত পাখির নীড়ের মতো। বিপর্যস্ত খড়কুটোগুলোকে
বিন্যস্ত করতে চেষ্টাশীল আমি, ঠিক সেই মুহূর্তেই
ভেসে এলো তোমার কণ্ঠস্বর।

আমার প্রতিক্ষণের নির্ভর তোমার জ্যোৎস্নামদির কণ্ঠস্বর;
আমি সেই অগোছালো পাখির নীড়ের কথা বলার
পর তুমি বললে, ‘এখন থেকে শুধু জ্বলবে তুমি,
যেমন আমি জ্বলছি’। তোমার কণ্ঠস্বরে
বেদনার গাঢ় আদিবাসী উচ্চারণ ছিল, ছিল
অপার সহিষ্ণুতার পরাগ-কেশর।

কয়েকটি নিস্তব্ধ মুহূর্তের পর
তুমি বললে, ‘অনেক আগে থেকেই
মোমবাতির আলো দেখতে আমার ভালো লাগে।
কখনো-কখনো ঘরের ইলেকট্রিক আলো
নিভিয়ে মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে থেকেছি
নিষ্কম্প একাগ্রতায়। দু’চোখ ভরে দেখেছি নিঃসঙ্গ
মোমবাতির একটু একটু করে জ্বলে যাওয়া, গলে যাওয়া;
সে এক নান্দনিক অভিজ্ঞতা আমার।
এখন আমি কালের শামাদানে নিজেই সেই একাকিনী মোমবাতি-
প্রতি পলে জ্বলছি, গলে গলে পড়ছি তপ্ত অশ্রুকণার মতো’।

তোমার এই বেদনার্ত কথাগুচ্ছের পিঠে কোনো কথা
না চাপিয়ে তাকিয়ে থাকি
শূন্যতায় বসবাসকারী অলীক জোনাকিদের দিকে
আর তোমার শব্দাবলিকে স্বার্থপরের মতো
কবিতার বীজ হিসেবে সঞ্চয় করি আমার
নিজস্ব গোলায় গভীর তন্ময়তায়।

৭.১০.৯৪